সমাধান স্থায়ী পুনর্বাসন
- ২০ জুন ২০২২, ০০:০০
পাহাড় ধসে আবারও প্রাণহানি ঘটেছে চট্টগ্রামে। দুটি আলাদা পাহাড়ধসের ঘটনায় মারা গেছেন চারজন। তার মধ্যে দুটি যমজ শিশুর মা-ও আছেন। ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুটি ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ জন। গত শনিবার ভোরে এবং গত শুক্রবার মধ্যরাতে নগরীর আকবর শাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনা ও ফয়’স লেক এরিয়ার লেকভিউ আবাসিক এলাকায় এ দুটি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।
এ মৃত্যু অনিবার্য ছিল না। প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড়ধস নিয়মিত ঘটনা। গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বর্ষণ হলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং সেটা প্রশাসনসহ সবারই জানা। এবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ বসতির লোকজনকে সরে যেতে সতর্ক করেছে, তাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রও করেছে। কিন্তু লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।
সবাই জানেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব বসতিতে মানুষ মৃত্যু ঘাড়ে করে দিনের পর দিন বসবাস করে সেগুলো অবৈধ। এক শ্রেণীর পাহাড়খেকো বা ভূমিদস্যু অবৈধভাবে পাহাড় কেটে এসব বসতি তৈরি করেন এবং বসতি গড়ে তোলেন। নি¤œ আয়ের যেসব মানুষ এসব বসতিতে বাস করেন তাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে যাবারও ভরসা পান না তারা। মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও হারাতে হয় কিনা সম্ভবত এমনই আশঙ্কা তাদের। কিন্তু প্রশাসন সব জেনেও অবৈধ পাহাড় কাটা এবং বসতি গড়া ভূমিদস্যু বা পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না অথবা নিতে পারে না।
ওইসব প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছে পরিবেশ অধিদফতর যে কতটা অসহায় সেটি এর আগে নানা ঘটনায় বহুবার প্রমাণিত। প্রভাবশালীরা প্রায়শ ক্ষমতাসীনদের মদদপ্রাপ্ত। তাই প্রশাসনের পক্ষে আদৌ কিছু করা সম্ভব নয়। দেশের গোটা ব্যবস্থাপনারই যখন একই চিত্র তখন পাহাড় ধসে দু’চারটে প্রাণহানির ঘটনা মেনে নেয়া ছাড়া আর কী করার আছে! প্রাণহানির পর কিছু সহমর্মিতা প্রকাশ করা হবে, তোড়জোড়ও হবে, তারপর তা তাই। এতে বিস্ময়েরও কিছু নেই। পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকবে; পাহাড়ের খাঁজে বসতি নামের মৃত্যুকূপগুলো অক্ষত থেকে যাবে আর নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষ মারা পড়বেন।
আমাদের জানা মতে, চট্টগ্রামসহ পুরো পার্বত্য এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পাহাড় কেটে তৈরি এরকম বসতিতে বসবাস করেন। খাগড়াছড়ি জেলা ও রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে হাজারও মানুষ বসবাস করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে বলা হলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করছেন না। অথচ টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধস ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী শত শত পরিবার প্রাণহানির ঝুঁকিতে রয়েছে। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় হাজারও পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
গণমাধ্যমের একটি খবরে সমস্যার সমাধানের একটি সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয় বিশিষ্টজন ও জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে। সেটা হলো, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। বর্ষার সময় লোকজনকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া কোনো সমাধান নয়। কাপ্তাই নতুনবাজার ঢাকা কলোনির একজন বাসিন্দা স্পষ্ট করেই কথাটা বলেছেন। তিনি বলেন, ঘরবাড়ি নাই, কষ্ট করে থাকি। আমরা কোথায় যাবো? আমাদের একটা স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র দেন। এক নারী বলেন, মরলে এখানে মরব, আর বাঁচলেও এখানে বাঁচব। তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন। প্রশ্ন হলো, মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাসকারী মানুষগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসনের দায়িত্ব কে নেবে?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা