সামাজিক সাহায্য নিশ্চিত হোক
- ১৭ জুন ২০২২, ০০:০০
মানুষের মধ্যে খাদ বা কমতি আছে। সবার দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা সমান নয়। কেউ সুঠাম কেউ দুর্বল বা কিছুটা ক্ষীণকায়। তার পরেও একটা নির্দিষ্ট মাত্রার শারীরিক সক্ষমতা থাকা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনযাপনে যোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। দৈহিক সামর্থ্যরে পাশাপাশি মানসিক সামর্থ্যও মানুষের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ শারীরিকভাবে হৃষ্টপুষ্ট হলেই হয় না; একইভাবে তার মানসিক পূর্ণতারও দরকার হয়। শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার ন্যূনতম মাত্রাও অনেকের মধ্যে থাকে না। তারা তাদের জীবন পরিচালনায় বড় ধরনের বাধার মধ্যে পড়ে। সেই মানুষকে প্রতিবন্ধী বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ প্রতিবন্ধী। সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা যতটা দয়া ও আনুকূল্য পাওয়ার তা তারা পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর (বিবিএস) এক জরিপ জানিয়েছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে শারীরিক বা মানসিক অন্তত কোনো একটি অক্ষমতা রয়েছে। এদের মধ্যে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ শারীরিক অক্ষম। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। বাকপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। শ্রবণ প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। বিবিএসের ওই জরিপে দেখা যায়, শহরের চেয়ে গ্রামে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা বেশি। নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে অক্ষমতার হার বেশি পাওয়া গেছে। জরিপটিতে নমুনা হিসেবে ৩৬ হাজার খানা থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময়ে এটি চালানো হয়। বাংলাদেশে সরকারি তথ-উপাত্তের ওপর অনেকসময় আস্থা রাখা যায় না। দুটো কারণে এমনটি হয়ে থাকে। এ দেশে এখনো দক্ষ জরিপ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এ ছাড়া সরকারের সবসময় একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। ফলে জনকল্যাণের চেয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি গুরুত্ব পাওয়ায় মূল কাজটি বাধাগ্রস্ত হয়।
২০১১ সালে দেশে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছিল। তখন দেশে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। ১১ বছরে আনুমানিক আরো দুই কোটি মানুষ বেড়েছে। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি হলে বিবিএসের এ জরিপের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ৪৮ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে। জনসংখ্যার একটা বিপুল অংশ অক্ষম। বিবিএসের জরিপটি চালানোর লক্ষ্য হচ্ছে, এ বিপুল জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে যাতে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এতে করে তাদের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যায়। জানা যাচ্ছে, প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়। সরকারি ও বেসরকারি (এনজিও) উভয় ধরনের সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে মূলধারা থেকে তারা পিছিয়ে পড়ছে। জরিপকালের আগের তিন মাসে তাদের ৩৮ শতাংশ কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পায়নি। মাত্র শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ এনজিও থেকে স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে। করোনা টিকা পায়নি ৫১ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের জন্য দেয়া সরকারি ভাতা পায়নি ৭৭ শতাংশ। প্রতিবন্ধিতার জন্য এরা বঞ্চনার পাশাপাশি হয়রানি ও বিদ্রুপেরও শিকার হচ্ছে। ৪০ শতাংশ হয়রানির শিকার। প্রতিবন্ধী সদস্য থাকার কারণে বিদ্রুপের শিকার হয়েছে পাঁচ শতাংশ পরিবার। ৪৬ শতাংশ অভিযোগ করেছে তারা বিচার পায়নি। নিজেদের প্রতিবন্ধিতার কারণে তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ৫৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা ও ৭৫ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।
সারা পৃথিবীতে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসজিডি) বাস্তবায়ন চলছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের তুলনায় ভালো করছে। এ উন্নয়নে সমাজের শতভাগ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার অঙ্গীকার রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের আরো করণীয় রয়েছে। দেশের বিশাল প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়কে মূল ধারায় আনতে হলে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগকে এ জরিপের ফলাফলকে বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রথমত তাদের বঞ্চনা ও হয়রানি থেকে বাঁচাতে হবে। অক্ষমতার কারণে যেন তারা কোনো অধিকার থেকে বাদ পড়ে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা সীমিত করার উদ্যোগ গ্রহণ। শিশুর জন্মদানেও এবং পরবর্তী সময়ে কোনো না কোনোভাবে মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। দরিদ্রতার কারণে মায়েরা প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম দেন। করোনা মহামারীর কারণে দরিদ্রতার হার বেড়ে গেছে। সামাজিক সুরক্ষা বলয়টি ঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেক মায়ের কাছে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পৌঁছাতে হবে। একইভাবে অন্যদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা ঠেকাতে সামাজিক উদ্যোগকে সক্রিয় রাখতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা