শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রুখতে হবে
- ১৪ জুন ২০২২, ০০:০০
এক বছরের ব্যবধানে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে সোয়া দুই লাখের মতো। আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ২২ লাখ ৪৩ হাজার ২৫৪ জন। চলতি বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে দুই লাখ ২২ হাজার জনের মতো।
অবশ্য, এসএসসিতে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দু’টি বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, যেহেতু গত দুই বছরের মধ্যে একবার শতভাগ পাস (পরীক্ষা ছাড়াই) করেছে, আরেক বছর পাসের হার ছিল ৯৪ শতাংশের মতো। সে কারণে অনিয়মিত শিক্ষার্থী এবার প্রায় নেই বললেই চলে। আরেকটি বিষয় হলো, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা রেজিস্ট্রেশন করে, তাদের একটি অংশ পরীক্ষায় ফরম পূরণ করে না। আগের দুটো বছরে যেহেতু একবার পরীক্ষাই হয়নি, যা আগে থেকেই বলা হয়েছিল। আবার গত বছর মাত্র তিন বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। এ জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছিল, তাদের প্রায় সবাই ফরম পূরণ করেছিল; কিন্তু এবার যেহেতু আবার পরীক্ষা হবে, তাই আগের মতোই যারা রেজিস্ট্রেশন করেছিল, তাদের সবাই পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেনি। এ দু’টি কারণ মিলিয়েই এবার পরীক্ষার্থী কমেছে।
শিক্ষামন্ত্রীর এমন ব্যাখ্যার পরও শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের উদ্বেগ যৌক্তিক এ কারণে যে, শুধু এসএসসি পরীক্ষার্থীর হিসেবেই নয়; মাধ্যমিকের পুরো স্তরেই করোনার দুই বছরে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। ব্যানবেইস সূত্র জানায়, করোনা পুরোমাত্রায় আঘাত করার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ে। সরকারি ওই সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের পর ২০২১ সালের এ সময়ে এক বছরেই মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী কমেছে ৬২ হাজার ১০৪ জন। অর্থাৎ ২০২০ সালে মাধ্যমিক স্তরে যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক কোটি দুই লাখ ৫২ হাজার, সেখানে এক বছর পরই ২০২১ সালে শিক্ষার্থী কমে হয়েছে এক কোটি এক লাখ ৯০ হাজার ২২ জন।
করোনার অভিঘাতে দেশে যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে এটা চরম বাস্তবতা। শিক্ষার সব পর্যায় থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে দেশী-বিদেশী পরিসংখ্যান দেখলেই যে কেউ তা বুঝতে পারবেন। সঙ্গত কারণে এসএসসিতে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার সরকারি বয়ানে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কারো সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়। বরং তারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তা-ই যুক্তিসঙ্গত।
শুধু ছাত্র ঝরে পড়াই নয়, আমরা যে দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি তার বড় প্রমাণ বৈশ্বিক সূচকে আমাদের কোনো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ¯্ররে তালিকাতেও স্থান পাচ্ছে না। উপরন্তু এতদিন যে সংখ্যার স্ফীতিতে দেশের শিক্ষার অগ্রগতির কথা সরকারিভাবে উচ্চকণ্ঠে বলা হতো সেই দাবিও ফিকে হয়ে আসছে এবারের এসএসসিতে পরীক্ষার্থী ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায়।
এমন পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, দেশের প্রকৃত ও টেকসই উন্নয়নে জনশক্তিকে মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলে মানবসম্পদে রূপান্তরের অন্য কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য অবশ্যই প্রকৃত চিত্র থাকতে হবে। আর সবার জানা, প্রকৃত চিত্র জানতে হলে সঠিক তথ্য থাকতে হবে। এটি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে হালনাগাদ শিক্ষাশুমারি। কেবল তখনই সম্ভব তথ্যভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে দেশে দ্রুত শিক্ষার বিস্তার ঘটানো। শুধু উন্নয়নের কথা বলে দেশের টেকসই অগ্রগতি সম্ভব নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা