দৃষ্টান্তমূলক বিচার নেই
- ১০ জুন ২০২২, ০০:০০
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখন আর কোথাও আলোচনা হয় না। এর অর্থ এই নয় যে, দেশে খুন, ধর্ষণ, চুরি ও ডাকাতি নেই। প্রতিদিনের সংবাদমাধ্যম এ ধরনের ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে যদিও অনেক ঘটনাই খবর হওয়ার সুযোগ হয় না সংবাদমাধ্যমে। প্রত্যেকটি বেআইনি কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে বেড়েছে। এর সাথে মনুষ্য সৃষ্ট বড় বড় দুর্যোগ এতটাই বেড়েছে, সাধারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরে পড়ছে না। এ নিয়ে নাগারিক সমাজের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আর সেভাবে উত্থাপিত হচ্ছে না। পরিস্থিতি এখন এতটাই নাজুক, দৈনন্দিন উচ্চহারে ঘটে চলা বিশৃঙ্খলাকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েছে সবাই। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষ খুন ধর্ষণ হতেই পারে, এটা সবার গা সওয়া হয়েছে। অথচ একটি সভ্য সমাজে এমন একটি ঘটনাও কখনো হওয়ার কথা ছিল না।
বৃহস্পতিবারের সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে পাঁচটি খুনের ঘটনা। একটি ঘটনায় ধর্ষণের শিকার হয়ে এক তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে বন্ধুদের প্ররোচনায় কক্সবাজার গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তিনি। আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে থাকে রাষ্ট্রে বিচার না পাওয়ার সংস্কৃতি। অপরাধীরা নানা ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে যায়। অন্য দিকে ভুক্তভোগীর সারা জীবনের জন্য নেমে আসে লাঞ্ছনা। দুর্বৃত্তদের পাতানো ফাঁদে পড়ে প্রায় প্রতিদিন নারীরা সম্ভ্রম হারাচ্ছেন। অপমান দুঃখে ও বিচার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ কেউ জীবনটাই শেষ করে দিচ্ছেন। এবার বান্দরবানে বেড়াতে এসে রিসোর্টে অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হয়েছেন ২২ বছরের এক যুবতী। একাধিক বন্ধুর সাথে তিনি পর্যটনে এসেছিলেন। আমাদের নৈতিক বন্ধন আগের চেয়ে শিথিল হওয়ার ফল অনেক ক্ষেত্রে বড় ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
রাজধানীর হাতিরঝিলে পুলিশ কনকর্ড প্লাজাসংলগ্ন লেকের পাড় থেকে ডিবিসি নিউজের প্রযোজক আবদুল বারীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। তার গলা ও বুকে ছুরির আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি হাতিরঝিল থেকে দৈনিক সময়ের আলোর সাংবাদিক হাবীব রহমানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সেটিও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হয়। ওই ঘটনারও তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। এ এলাকায় বিভিন্ন সময় আরো মানুষ খুন হয়েছেন। গুমের শিকার মানুষও এ এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে। জয়পুরহাটে দুর্বৃত্তরা এক মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে যায়। কয়েক দিন আগে আরেকজন শিক্ষকের কবজি কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সাথে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের বেশি জড়িত পাওয়া যাচ্ছে। এ যাত্রায় তারা নিজেরাও খুন হচ্ছেন, গুরুতর আহত হচ্ছেন। এবার শরীয়তপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। ১৪ দলীয় জোট সরকারের ভাগীদার জাতীয় পার্টির মধ্যেও মারামারি দেখা গেল। টাঙ্গাইলে দলটির দু-গ্রুপের সংঘর্ষে সাবেক এক এমপিসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্তর্দলীয় কোন্দলে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়মিত বিঘিœত হচ্ছে।
এক দিনের খুন ধর্ষণ ও মারামারির যে ঘটনা আমরা উল্লেখ করলাম, এটি ব্যতিক্রম কিছু নয়। প্রতিদিন সারা দেশে এমন ঘটনা ঘটেই চলছে। পশ্চিমে ‘লাইফ ম্যাটার’ নামে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে সেগুলো এখন পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গ ও মুসলমানদের ব্যাপারে। কিছু কিছু দেশে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন এমনকি প্রাণহরণ সহজ। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর পাশাপাশি পুলিশ পর্যন্ত এমন চরম বর্ণবাদী আচরণ করে থাকে। আমাদের দেশে এর শিকার হচ্ছে প্রধানত নারী, শিশু ও সরকারের বিরোধীরা। সরকারের প্রশাসন এসব ঘটনার প্রতিকারে গুরুত্ব দেয় না। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। বরং এ দুর্বলতার কারণে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাও বলি হয়ে যাচ্ছেন।
এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে আইনের শাসনের অনুশীলন করতে হবে। হাতিরঝিলে জানুয়ারিতে সাংবাদিক খুন হওয়ার ঘটনাটির তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা গেলে একই জায়গায় পরবর্তী ঘটনাটি ঘটানোর সাহস পেত না খুনিরা। অপরাধ পুনঃসংঘটনের একই ধরনের কারণ সারা দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ অবস্থা থেকে মানুষ নিস্তার চায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা