ব্যবস্থা নিতে হয়েছে ভারতকে
- ০৮ জুন ২০২২, ০০:০০
শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:কে নিয়ে উপর্যুপরি অবমাননাকর মন্তব্য করেছে ভারতীয় ক্ষমতাসীন দল বিজেপির পদধারী নেতারা। প্রথমে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দলটির মুখপাত্র নূপুর শর্মা কটূক্তি করেন। এরপর দিল্লি থেকে তাদের আরেক নেতা নবীন কুমার মুহাম্মদ সা:-এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘৃণাসূচক টুইট করেন। এরপর মুসলিম দেশগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেক দেশ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, অনেক দেশে জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে চাপে পড়ে ভারত বিজেপির অভিযুক্ত দুই নেতার একজনকে সাময়িকভাবে, অন্যজনকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। বিজেপির নেতৃত্বে ভারতে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানরা পীড়নের শিকার হচ্ছেন। তাদের উপাসনালয়, বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হচ্ছে, প্রকাশ্যে খুন করা হচ্ছে। এসব নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশটিকে জবাবদিহি করতে হয় না। মুহাম্মদ সা:কে নিয়ে কটূক্তির পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যাচ্ছে- মুসলিমবিশ্ব এসব নিয়ে ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারলে দেশটি মুসলমানদের ওপর অবাধে পীড়ন চালিয়ে যেতে পারত না।
মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে জুমার দিন বিক্ষোভ করতে চাইলে বেদম মারধর হেনস্তা করে অনেককে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এর আগেও একই ধরনের কর্মকাণ্ড বহু ঘটেছে। কোনো ধরনের পীড়নের ঘটনা ঘটলে বা ধর্মীয় বঞ্চনা সৃষ্টি করা হলে তা নিয়ে মুসলমানরা দেশটিতে প্রতিবাদ করারও অধিকার পান না। এক দিকে বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো তাদের ওপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়, অন্য দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়ন চালায়। উত্তর প্রদেশ, দিল্লিø, আসাম, ত্রিপুরাসহ সারা দেশে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এই প্রবণতার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র্রের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গত ২০২১ সালজুড়ে খুন, জখম ও ভয় দেখানোর ঘটনা অবিরাম ভারতের সর্বত্র সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত ছিল। এর মধ্যে গো-রক্ষার নামে প্রকাশ্যে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার রিপোর্টে গণতন্ত্রের অবনমন, মানবাধিকার হরণ, ঘৃণা ভাষণ ছড়িয়ে দেয়া সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছে।
আমাদের প্রতিবেশী আসাম ও ত্রিপুরায় বিগত বছরগুলোতে মুসলমানদের পীড়নের পাশাপাশি বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ, নাগরিকত্ব হরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যা এ অঞ্চলের জন্য ভীতিকর সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করবে। শুধু ধর্মের কারণে মৌলিক অধিকার হরণের কাজ ভারত পুরো বাধাহীনভাবে করতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে মুহাম্মদ সা:কে কটূক্তির প্রতিক্রিয়ায় ভারতের নড়েচড়ে বসার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। কটূক্তির ফলে মুসলমানরা মানসিক আঘাত পেলেও খুন, উচ্ছেদ ও নাগরিকত্ব হারানোর মতো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও কাতার, কুয়েত ও ইরান ভারতীয় দূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে অন্যদের ‘বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি সম্মান’ জানানোর আহ্বান জানায়। পাকিস্তান সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষ থেকে এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ ছাড়া মুসলিম দেশগুলোর জনসাধারণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে। কোনো কোনো দেশ নাগরিক পর্যায়ে নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘৃণা প্রকাশ করছে। এসব দেশ থেকে ভারত বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করে। জনশক্তি ও পণ্য রফতানির ওপর আঘাত আসার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় ভারত সরকার তড়িঘড়ি করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে চলমান সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর তারা জাতীয়ভাবে বৈষম্য করার যে নীতি নিয়েছে সেটিকে ঠেকাতে উল্টো মুসলিমবিশ্বকে এর বিরুদ্ধে কিছু নীতি গ্রহণ করতে হবে। এটি হতে পারে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ব্যবহার করার মাধ্যমে। ভারতের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি মধ্যপ্রাচ্য। এ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তাদের বাণিজ্য মসৃণ রাখার শর্ত হিসেবে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি উত্থাপন করতে পারে ভারতের কাছে। মুহাম্মদ সা:-এর অবমাননার পর ভারতের সাড়া দেখে এটাকে একটা কার্যকর কৌশল মনে হচ্ছে। কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই রাষ্ট্র্র হিসেবে ভারত সবাইকে সমানভাবে দেখার উদার মানবিক নীতিতে ফিরে যেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা