২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জমির উর্বরতা ফেরাতে কৃষকের প্রয়াস

এই যোদ্ধাদের বিজয়ই কাম্য

-

সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিক জানায়, আট বিঘা জমিতে জৈবসারসমৃদ্ধ ছেঁড়া মুগকলাইর চাষ করে জৈবযুদ্ধে নেমেছেন ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষক আবদুল জলিল। এর কাণ্ড-পাতা পচে জমিতে গুরুত্বপূর্ণ জৈবসারে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তা ছাড়া কলাইগাছের শিকড়ে গোল গোল নুডিউল উৎপন্ন হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেনের খনি। তাই কলাই চাষে ইউরিয়ার মতো সার দেয়ার দরকার হয় না। এ কলাই চাষ করা জমিতে পরে অন্য কোনো ফসল চাষ করার সময় জৈবসারসহ কোনো সারের ঘাটতি থাকে না।
জানা গেছে, দো-ফসলা জমিতে উৎপাদন অনেক কম হতো। তবে তখন মৃত্তিকা বা মাটি ছিল জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ। চাহিদার প্রেক্ষাপটে জমিগুলো বছরে তিন ফসল, এমনকি কখনোবা চার ফসল ফলানোর উপযোগী হয়ে উঠেছে। যান্ত্রিকীকরণের আধুনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন অনেক বেড়েছে। বেড়ে গেছে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহার, যা মৃত্তিকাদূষণের একটি বড় হেতু। এ দিকে প্রতিনিয়ত পানি ও বাতাস দূষিত হচ্ছে নানাভাবে। মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক রাসায়নিক বিষরূপে পরিগণিত হচ্ছে। ফলে এর দ্বারা উৎপাদিত শস্য নিরাপদ নয় এবং মানুষ এটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এতে মানুষ নানা প্রকার জটিল-কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য বর্তমানে সময়ের প্রয়োজন। রাসায়নিকের ব্যবহার বা প্রয়োগ হ্রাস করে জমিতে জৈব উপাদান বাড়ানোর ওপর সরকারও জোর দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা প্রদানের লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদকদের প্রত্যেক বছর বাছাই করে সম্মাননা দেয়া হচ্ছে সরকারিভাবেই। সেই সাথে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার্থে জমিতে জৈবসার ব্যবহার করে বিষমুক্ত তথা নিরাপদ খাদ্যের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অবশ্য এ দেশের কৃষকরা আজো নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে বেশি সচেতন নন। কারণ তারা চাচ্ছেন, রাসায়নিক সার দিয়ে বেশি আয় করে কৃষিতে তাদের লোকসান পোষাতে; কিন্তু ঝিনাইদহের কৃষক আবদুল জলিল একজন পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব ব্যতিক্রম। তাই তিনি মনে করেন, জৈব উপাদানের অভাবে মাটির সুস্থতা বিপন্ন হবে। কৃষিজীবী আবদুল জলিল মোল্লা এটা কিছুতেই মানতে পারেন না। এ জন্য তিনি নেমেছেন জৈবযুদ্ধে। এর অংশরূপে এবারো তিনি আট বিঘা জমিতে জৈবসার দিয়ে ছেঁড়া মুগকলাই চাষ করেছেন। তার মতে, কলাইর পাতা ও কাণ্ড পচে গিয়ে জমি হবে জৈবসারে সমৃদ্ধ। অল্প ব্যয়ে ‘বোনাস ফসল’ হিসেবে অধিক মুনাফা ঘরে আসবে। তিনি বেথুলির অতীতের আদর্শ চাষি মরহুম আবদুল মজিদ মোল্লার ছেলে।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, কালিগঞ্জ উপজেলাতে সহস্রাধিক হেক্টরে দেয়া বারি-৬ জাতের মুগকলাই চাষ করা হচ্ছে। এটা সর্বদাই মাটিতে জৈব উপাদান ও উর্বরতা বাড়িয়ে দেয়। ডালজাতীয় এ ফসল বোনাস হিসেবে খুব কম খরচে লাভের মুখ দেখায়। কারণ এতে জমিতে জৈবসারের আস্তানা গড়ে ওঠে। জমি হয়ে ওঠে উর্বর।
আবদুল জলিলের ক্ষেতে কলাই ফলন ভালো হয়েছে। তার কথা, জৈবসারের অভাব এত অধিক যে, অনেকের ভরাক্ষেতও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কীটপতঙ্গের উপদ্রবকে বেশি দোষ দিয়ে অনবরত কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রয়োগ করেও ফল মিলছে না। আসলে গুরুত্বপূর্ণ জৈব উপাদান মাটিতে কমে যাচ্ছে। তাই সবার আগে এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যায়। এ কারণে তিনি বারি-১ মুগকলাই চাষ করেছেন। আশা আছে, এই বোনাস ফসল দীর্ঘকাল ক্ষয়ে যাওয়া জৈব উপাদান পূরণ করে মৃত্তিকা সবল ও উর্বর করে তুলবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, ‘এ মুগকলাই খুব লাভজনক। এর পাতা সবুজ সারে পূর্ণ এবং এর কাণ্ড পচে অনেক জৈবসার পাওয়া যায়। তদুপরি, শিকড়ে হয় ‘নুডিউল’। তাই ইউরিয়া সার দিতে হয় না। পরে অন্য ফসল চাষে আর সার লাগে না। এক বিঘায় পাঁচ মণ পর্যন্ত কলাই পাওয়া যায়। এর দাম সারা বছরই থাকে।’
আমরা জলিল মোল্লার মতো দেশের সব জৈবযোদ্ধার বিজয় প্রত্যাশা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement