কারখানার নিরাপদ কর্মপরিবেশ এখনো অধরা
- ০৭ জুন ২০২২, ০০:০০
চট্টগ্রামের শীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে গত শনিবার রাতের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত ৪১ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। ডিপোটি ইউরোপের একটি দেশের বিনিয়োগকারীদের সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।
দেশে মাঝে মধ্যেই কারখানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। নিকট অতীতে সাভারে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু এবং অগণিত পোশাককর্মীর আহত হওয়ার ঘটনা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত ঘটনা। আশুলিয়ায় তাজরীন গার্মেন্টে আগুনে অঙ্গার হয়েছেন শতাধিক শ্রমিক। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী নিহত হন। লক্ষণীয়, দেশে কারখানায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন অনেকে। তবে সেসব দুর্ঘটনায় হতাহত বেশি না হওয়ায় তা আলোচনায় আসছে না।
এ কথা ঠিক, রানা প্লাজা এবং তাজরীনের ঘটনার পর বিদেশী ক্রেতাদের চাপে আমাদের তৈরী পোশাকসহ রফতানিমুখী কারখানাগুলোতে কমপ্লায়েন্স পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে; কিন্তু তৈরী পোশাক অথবা রফতানিমুখী নয়, এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা কতটা নাজুক সেটি বোঝা যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। ওই দুর্ঘটনায় ৫২ জনের প্রাণ যায়। বাস্তবে দেশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরই শুধু ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে সেজান জুস কারখানার ঘটনার পর সরকার কিছু উদ্যোগ নেয়। তাতে শিল্পকারখানার পরিবেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে বটে; কিন্তু এখনো কর্মপরিবেশ যে নিরাপদ নয়, তারই প্রমাণ শীতাকুণ্ডের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ কথা বলা বাড়াবাড়ি হবে না যে, কারখানাগুলোর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতে পারত।
শ্রম আইন, ২০০৬ এবং শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, বড় ধরনের কোনো স্থাপনা বা কোনো কারখানার একটি অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা থাকতে হয়। এর অর্থ হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের দাহ্য পদার্থ আছে, তার বিশদ বর্ণনা থাকতে হবে। এরপর প্রতিরোধের বিষয়। সর্বোপরি আছে ফায়ার ফাইটিংয়ের বিষয়টি। নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়ার পরও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কিভাবে তার ব্যবস্থাপনা হবে, বিষয়টিও পরিকল্পনায় থাকতে হবে।
শ্রমবিধিতে বলা আছে, ৫০ জনের অধিক জনবলের কোনো কারখানা হলে সেখানে একটি নিরাপত্তা (সেফটি) কমিটি থাকবে। বিএম ডিপোতে কমিটি আছে কি না তা দেখার বিষয়। কারখানা বা স্থাপনায় শতকরা ছয়জন আগুন নেভাতে, ছয়জন উদ্ধারে এবং ছয়জন প্রাথমিক প্রতিবিধানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থাকতে হবে। অর্থাৎ মোট ১৮ শতাংশ প্রশিক্ষিত কর্মী থাকবে। এটাও দেখার বিষয়- সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনাকবলিত ডিপোতে প্রশিক্ষিত এসব কর্মী ছিল কি না। তাদের ‘ফায়ার ফাইটিং’ ব্যবস্থা ছিল কি না।
যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি-রফতানি করে, সেখানে ম্যাটেরিয়াল সেফটি ডেটা শিট (এমএসডিএস) থাকে। কী ধরনের দাহ্য পদার্থ কনটেইনারে আছে, তা লেখা থাকবে। পাশাপাশি এসব পদার্থের ব্যবহার কেমন করে করতে হবে, তা-ও লেখা থাকতে হবে। ডিপোটিতে এমএসডিএস ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এ ছাড়া লক্ষণীয় হলো, এখানে বিভিন্ন পর্বে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া বা ‘ড্রিল’ হয়েছিল কি না।
আমরা মনে করি, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে শিল্প-কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। সতর্কতার পরও যদি দুর্ঘটনায় কারখানায় কেউ কর্মরত অবস্থায় মারা যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কোনো মানুষের মৃত্যুই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে পোষাণোর নয়। আমরা মনে করি, শীতাকুণ্ডে নিহতদের পরিবারকে দুই লাখ নয়, বর্তমান বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারণ করতে হবে। আমরা শীতাকুণ্ডে দুর্ঘটনায় নিহতদের রূহের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা