সমস্যা নিরসনে সংবেদনশীল হোন
- ০৭ জুন ২০২২, ০০:০০
বেতনভাতা বাড়ানোর দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছেন তৈরী পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গত শনি ও রোববার মিরপুরে শ্রমিকদের বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। তারা সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘ সময় ধরে বিক্ষোভ করে। এতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি বাস ভাঙচুর করে, দু’টি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি চার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করা সাময়িক সমাধান। স্থায়ী সমাধানে দরকার সমস্যার যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নিয়ে আলোচনা করে যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করা; কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের বা গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সংবেদনশীল মনোভাবের আভাস পাওয়া যায়নি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেতনভাতা বাড়ানোর দাবিতে রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা গত রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে সড়ক অবরোধ করে। ওই দিন দুপুরে শ্রমভবনে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় সভায় একজন শ্রমিকনেতা যিনি একই সাথে সংসদ-সদস্য সেই তিনি বলেছেন, শ্রমিকদের এই আন্দোলন ‘হঠকারী’ পদক্ষেপ। একজন শ্রমিকনেতা শ্রমিকদের আন্দোলনে কোনো যৌক্তিকতা দেখতে পান না এটা বিস্ময়কর।
শ্রমিকরা বলছে, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়লেও তাদের বেতন বাড়েনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম না কমলে তাদের বেতন বাড়াতে হবে। একজন পোশাককর্মী বলেন, আমরা যা বেতন পাই সেটি দিয়ে ঢাকায় থাকা খাওয়াই কঠিন হয়। গ্রামে আমাদের পরিবার থাকে। তারা টাকার আশায় বসে থাকে। তাদের জন্য টাকা পাঠানোর মতো অবস্থা আমাদের নেই।
এই বাস্তবতা পুরোপুরি উপেক্ষা করা হচ্ছে কোন যুক্তিতে আমরা জানি না। কিন্তু অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা যেসব হিসাব দিচ্ছেন তাতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কতটা কঠিন হয়ে উঠেছে তার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক গবেষণার তথ্য দিয়ে বলেছে, ঢাকায় বসবাসরত চারজনের একটি পরিবারের মাসে শুধু খাবার খরচই পড়ে ২১ হাজার ৩৫৮ টাকা। এই খরচ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এর সাথে এক কক্ষের ঘরভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল, চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানের পড়ালেখা, যাতায়াত, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিল হিসাব করলে ঢাকার আশপাশের এলাকায় চার সদস্যের এক পরিবারের মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৫৪৮ টাকা। একজন শ্রমিক কত টাকা বেতন পায় সে ধারণা যাদের আছে তারাই বুঝতে পারবেন শ্রমিকশ্রেণী কী দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে; কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা বা মন্ত্রীরা বাস্তবতা থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন তা তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে স্পষ্ট। কেউ বলেছেন, দেশের মানুষ এখন তিনবেলা গোশত খেতে পারে। কেউ বলেছেন, দেশের এক-পঞ্চমাংশ মানুষের জীবনযাত্রা ইউরোপীয় মানের। কিন্তু কত মানুষ মাসে একবারো গোশত চোখে দেখে না সেই হিসাব তারা দেন না, খোঁজও রাখেন না। একজন অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছেন, শ্রমিকদের মজুরি যদি কিছুটা বাড়ানো যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পরও তারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
আমরা মনে করি, শ্রমিকদের অসন্তোষ উপেক্ষা করার মানে হবে, ধূমায়িত আগুন চেপে রাখার শামিল, যা কোনো একসময় বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেটি শুধু দেশের তৈরী পোশাক খাতই নয়; বরং পুরো অর্থনীতির জন্যই হয়ে উঠতে পারে অশনিসঙ্কেত। সঙ্গত কারণে দেশের সব শ্রেণীর শ্রমিকের জন্য যৌক্তিকভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো পুনঃনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা এখন সময়ের দাবি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা