আইন মানছে না সংশ্লিষ্টরা
- ০৬ জুন ২০২২, ০২:১৪
৫ জুন পরিবেশ দিবস উপলক্ষে দূষণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে সামনে আসে গণমাধ্যমে। আমাদের পানি, মাটি ও বায়ু সবকিছু মাত্রাছাড়া দূষণের শিকার হচ্ছে। সারা দেশে এ উচ্চ দূষণে নিজেদের বিবেকহীন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকায় নানামাত্রিক দূষণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার আশপাশের নদীর পানি ও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আলাদা খবরে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের মন্তব্য, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের পানিতে কেউ পড়লে এমনিতেই মারা যাবেন। তাকে ডুবে মরতে হবে না। অন্য খবর হলোÑ প্লাস্টিক বোমার ওপর ঢাকাবাসী বসবাস করছেন। এভাবে ক্রমাগত দূষণ চলতে থাকলে শহরটির প্রকৃতি একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। নগরীর বাসিন্দারাও আক্রান্ত হবেন জটিল রোগ-ব্যাধিতে।
পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর এ চৌধুরী বলেন, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের পানি এতটাই বিষাক্ত হয়েছে, মার্চ- এপ্রিলে কেউ পড়লে এমনিতেই মারা যাবেন। ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি নদীর একই পরিণতি হতে চলেছে। ক্ষুদ্র মাঝারি ভারী সবধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ঢাকা ঘিরে। তবে এসব কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। পুরান ঢাকার ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টানাহেঁচড়া চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তাবিত এলাকায় সরানো যায়নি। যেগুলো সরানো হয়েছে এবং যেগুলো নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেসব কারখানায় সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া কেউ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলেননি। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সব রাসায়নিক দ্রব্য সরাসরি নদীর পানিতে এসে পড়ছে। ফলে এসব নদীতে নেই কোনো মাছ, জলজপ্রাণী ও উদ্ভিদ। শুধু ঢাকার ভেতরে নদী নয়; শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর ঢাকার সব নদীতে এ দূষণ ছড়িয়েছে।
বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও জার্মানির আরো দুটো বিশ্ববিদ্যালয় মিলে ঢাকার প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে গবেষণা চালায়। সেই গবেষণার ফল নিয়ে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘আর্থ’-এ গত বছর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে মন্তব্য করা হয়েছে, অচিরেই এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঢাকায় পরিবেশগত বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। একবার ব্যবহারের পর ব্যবহৃত ৮০ শতাংশ পলিথিন মাটিতে ফেলা হচ্ছে। নালা ও নদী হয়ে শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে গিয়ে জড়ো হচ্ছে। এভাবে পানিদূষণের তালিকায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। এর সর্বমোট ব্যবহারে দশম অবস্থানে আমরা। ব্যবহৃত পলিথিনের বড় একটা অংশ মাটি ও পানি হয়ে খাবারে চক্রাকারে ঢুকে পড়ছে মানবদেহে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুজনিত রোগ এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে এই দূষণ।
২০২১-২০৩০ সালের মধ্যে পলিথিন ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংক গত বছর এক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে। অন্য দিকে পলিথিন নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে বিগত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে দেশে বারবার আইন করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষা ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। পলিথিন উৎপাদন, ব্যবহার ও কেনাবেচা করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। বাস্তবে ২০০৫-২০২২ সালের মধ্যে সারা দেশে এর ব্যবহার তিনগুণ বেড়েছে। আমাদের দেশে অন্যান্য আইনের মতো এটিও পরিবেশ রক্ষায় কাজে আসেনি।
নদী রক্ষায় গঠন করা হয়েছে আলাদা কমিশন। এ নিয়ে উচ্চ আদালতের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ এবং সুনির্দিষ্ট আদেশও রয়েছে। নিষিদ্ধ পলিথিনের মাত্রাছাড়া ব্যবহার ও নদীদূষণ-দখল বন্ধ দুটো ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ রাজনৈতিক। ক্ষমতাবানরা আইন না মানার শক্তি রাখেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে নিজেদের পক্ষে কাজ করানোর সামর্থ্য রাখেন তারা। অথচ এর সাথে রয়েছে মানুষের বাঁচা-মরার সম্পর্ক। সবার প্রত্যাশা, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কাকে এবার আমলে নেয়া হবে। প্রচলিত সব আইন সরকার কার্যকর করবে। দেশের নদীগুলো বিষমুক্ত এবং দখলমুক্ত হবে। মাত্রাতিরিক্ত পলিথিন উৎপাদন বন্ধ হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা