হিজাব নারীর সাংবিধানিক অধিকার
- ০৪ জুন ২০২২, ০০:০০
উচ্চ আদালত গত বৃহস্পতিবার এক মন্তব্যে বলেছেন, ‘হিজাব নারীর সাংবিধানিক অধিকার’। এক রিটের শুনানির সময় এমন মন্তব্য করেন আদালত। ১৫টি জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার কারণে হেনস্তার শিকার শিক্ষার্থীদের পৃথক ঘটনা উদ্ধৃত করে রিটটি করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিজাবপরিহিতা মুসলমান নারীরা অপমান, লাঞ্ছনা, হেনস্তা এমনকি শারীরিকভাবে নিগৃহীত হচ্ছিলেন। জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলমান হওয়ার পরও এমন অবমাননাকর আচরণ বিস্ময়কর। সামাজিক বন্ধনগুলো এমনভাবে ছেঁটে ফেলা হয়েছে; যার জোরালো প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ থাকছে না। প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের থেকে হেনস্তাকারীরা আশকারা পাচ্ছে। ধর্মের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে গিয়ে দেশে এই বিপর্যয়। আশা করা যায়, ধর্মীয় ও সামাজিক শক্তির পুনরুত্থানের মাধ্যমে এই অসঙ্গতি আগামী দিনে মেরামত হবে। সংশ্লিষ্ট দুই বিচারক আরো কিছু আদেশ দিয়েছেন, সেগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
শুনানিকালে হেনস্তার ঘটনাগুলো তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। আগামী দুই মাসের মধ্যে শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ক তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। আদালত আরো বলেছেন, ‘এখানে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এবং সেই অধিকার সমুন্নত রাখা রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব।’ তবে এই দায়িত্ব পালনে সরকার দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলা ও গাফিলতি করেছে। ফলে বহু মুসলমান নারী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে ড্রেস কোড চাপিয়ে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক একাই এমন বৈষম্যমূলক নিয়ম চাপিয়েছেন।
বিষয়টি আরো দৃষ্টিকটু ঠেকেছে; যখন দেখা গেল ভিন্নধর্মের ব্যক্তিরাও মুসলমানদের ওপর এটি চাপিয়ে দিতে চাইছেন। এমন ঘটনা বর্তমান সরকারের আমলে বহু ঘটেছে। চট্টগ্রাম মিরেরসরাইয়ের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তির আচরণটি এমনই। চলতি বছরের ২৯ মার্চ স্কুলে হিজাব পরে আসে তিন ছাত্রী। অ্যাসেম্বলি শেষে তুষার কান্তি তাদের হিজাব খুলে ফেলতে পীড়াপীড়ি করেন। ছাত্রীরা আদেশ অমান্য করায় তিনি তাদের বেত্রাঘাত করেন। তাদের অভিভাবকরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাননি। ছাত্রীদের স্কুলে থাকতে হলে হিজাব ছেড়ে দেয়ার নিয়মটি জারি করা হয় স্কুলটিতে। ছাত্রীদের তিনি আপাতত দয়া করেছেন; কিন্তু পরের বছর থেকে স্কুলে থাকতে হলে অবশ্যই হিজাব ছেড়ে দেয়ার শর্ত জারি রয়েছে। একই ধরনের ঘটনা ঘটছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও। শ্রেণিকক্ষে গিয়ে তারা মুসলমানবিদ্বেষী শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত বিদ্রুপের শিকার হচ্ছে। শিক্ষকের ঘৃণার শিকার হওয়ায় তা যেমন ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীদের ফলে প্রভাব ফেলছে, তেমনি তাদের মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। এ ধারা চাকরি ও সামাজিক ক্ষেত্রেও ছোঁয়াছে রোগের মতো বিস্তার ঘটেছে।
হিজাব নিয়ে ভারতে মুসলমানরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। সেখানে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো এ অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে। সরকার এবং আদালতেও এর প্রভাব পড়েছে। রায়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ড্রেস কোড চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশটিতে। বিস্ময়কর হলো- বাংলাদেশেও তারই ধারাবাহিকতা লক্ষণীয়। এখানে সরকারসহ পুরো স্টাবলিশমেন্ট মুসলমানদের মৌলিক অধিকার হরণের সময় নীরবতার নীতি অবলম্বন করছে। আমাদের দেশের মিডিয়া ধর্মীয় এমন বিদ্বেষমূলক অবমাননাকর ঘৃণ্য কাজকে প্রগতিশীলতা বলে মনে করে। সে জন্য অনাকাক্সিক্ষত হলেও এসব ঘটনার খবর মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায় না। এসব কারণে ঘটনার শিকার হিজাব পরিহিতাদের একে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। বিলম্বে হলেও উচ্চ আদালতের মন্তব্য ইতিবাচক এবং আশাপ্রদ। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উত্থাপিত ঘটনাগুলোর স্বচ্ছ তদন্ত হোক। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রত্যাশা, সারা দেশে হিজাব পরার কারণে যত যাতনার ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটির যথাযথ প্রতিকার হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা