২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান

স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম জালিয়াতি দূর হোক

-

রোগব্যাধি শনাক্ত করতে মানুষজন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। যাতে রোগের সঠিক চিকিৎসা করানো যায়। ডায়াগনসিসের কোনো একটি নির্দিষ্ট টেস্টের ফল যেখানেই করা হোক না কেন তা একই হওয়ার কথা। সময় ও পরিস্থিতির কারণে কিছুটা বিচ্যুতি হতে পারে; কিন্তু দেশে প্রায়ই দেখা যায়, একই পরীক্ষার ফল সম্পূর্ণ উল্টো পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল নিয়ে প্রায়ই আমরা সমালোচনা দেখতে পাই। এর কারণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা। উপযুক্ত যন্ত্রপাতি, ডাক্তার এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান ছাড়াই অনেকে এই ব্যবসায় নেমেছেন। স্বাস্থ্যসেবার সব বিভাগে একই ধরনের দুরবস্থা লক্ষণীয়। শুধু আমাদের দেশেই এটি সম্ভব হচ্ছে।
প্রত্যেকটি দেশে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। মানুষের জীবন নিয়ে কেউ যাতে যেনতেনভাবে ব্যবসা করতে না পারেন সে জন্য কঠোর নিয়ম-কানুন আরোপ করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো সেসব নিয়মিত মেনে চলে কি না অব্যাহতভাবে তা যাচাই করা হয়। দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে অন্যান্য খাতের মতো স্বাস্থ্যেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। সরকার বিপর্যয় মোকাবেলায় বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিলেও তা নিয়ে অসাধু বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি করেছে। করোনার জন্য জরুরি জিনিসপত্র ক্রয়েও হয়েছে দুর্নীতি। হাসপাতাল নির্মাণের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়েও নয়ছয় হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার ছিলÑ করোনার টেস্ট নিয়ে দুর্নীতি। দোকান দেয়ার মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ওই সব অপকর্ম নিয়ে সাহেদ ও সাবরিনার দুর্নীতি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছিল।
দেখা গেছে, দেশে স্বাস্থ্য খাতের দায়িত্বশীল পর্যায়ের অনেকে এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত। কেউ এটিকে নিয়ে করেছেন গাফিলতি। ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানো একটি স্পর্শকাতর ব্যবসায়। এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হয়। স্বাস্থ্যের সরকারি কর্মকর্তারা সে অবকাঠামো দেখে স্বীকৃতি দিলে তবেই প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হতে পারে। জানা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলে শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে এ ব্যবসায় করছেন অনেকে। অন্য দিকে মফস্বলে সেটিও সতর্কতার সাথে যাচাই করা হচ্ছে না। সারা দেশে ১১ হাজার অবৈধ স্বাস্থ্য সেন্টার আছে বলে জানা যাচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমের নমুনা এতে পরিষ্কার বোঝা যায়।
এবার স্বাস্থ্য অধিদফতর অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে। এ ব্যাপারে বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম গতকাল রোববার শেষ হওয়ার পর অভিযান শুরু হয়েছে। গত শনিবার শতাধিক প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। সরকারের এই অভিযান আমাদের স্বাস্থ্যসেবার অভ্যন্তরে ঘাপলা দূর করতে পরিচালিত হচ্ছে, নাকি এটিও আইওয়াশ সেটি কাজে প্রমাণ মিলবে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি ভূরি ভূরি ভুয়া চিকিৎসকের কাহিনী। সারা দেশে এমন হাতুড়ে ডাক্তাররা নিজেদের রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বলে অনেক মানুষের সর্বনাশ করেছে। এরা চিকিৎসার বড় বড় ডিগ্রিও অবৈধভাবে সংগ্রহ করে নিজেদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে। ভুয়া নার্সের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
সরকারের অভিযানের প্রধান লক্ষ্য ভুয়া ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে যাদের মূলত কাগজপত্র নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপযুক্ত অবকাঠামো রয়েছে কি না, সেখানকার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি মানসম্পন্ন কি না, এমনকি উপযুক্ত ডাক্তার, নার্স ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান রয়েছে কি না তা-ও যাচাই করতে হবে। এ অভিযান সফল করতে হলে স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। নিতে হবে ভুয়া চিকিৎসক-নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।


আরো সংবাদ



premium cement