পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে
- ২৯ মে ২০২২, ০০:০০
একসময় সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলে পরিচিত ছিল বাংলাদেশ। এখনো এ দেশ ঝড়, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ও পশু-পাখির প্রাণহানি, বিপুল অঙ্কের সম্পদের ক্ষতি এবং ফসল বিনষ্ট হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশ বিপর্যয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েছে। বাংলাদেশ সেই তালিকায় প্রথম সারির দেশগুলোর একটি। বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আমাদের দেশে আগামীতে আরো বেশি সংখ্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলতি বছর লা নিনা ও হিমালয়ের হিমবাহ গলনে এবারের বর্ষায় দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে এবার বড় আকারের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে বর্তমানে বিরাজমান তাপপ্রবাহে হিমালয়ের হিমবাহ গলে যেতে পারে। হিমবাহ গলনে স্বাভাবিক বন্যার পরিধি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সাথে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে চলছে ‘লা নিনা’র প্রভাব। এতেও বন্যার আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, ১৯৯৮ সালের লা নিনা বছরের সাথে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে হিমবাহ অঞ্চলের বেশি বরফ গলে নিচে বাংলাদেশের দিকে নেমে আসায় একটি বড় ধরনের বন্যা সংঘটিত হয়। ১৯৮৭ সালের বন্যাও হয়েছিল একই কারণে। ওই বছরও ছিল মাঝারি ধরনের লা নিনার বছর। এর সাথে তাপপ্রবাহে হিমালয়ের বরফ গলে গিয়েছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি; যদিও ১৯৮৭ সালের বন্যা হয় এল নিনো বছরে। স্মরণযোগ্য, সবচেয়ে শক্তিশালী লা নিনায় ১৯৮৮ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সাত ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে নিচে নেমে আসে। শেষ লা নিনাটি ২০১৬ সালে সংঘটিত হয়।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরে ২০২২ সাল লা নিনার বছর। ফলে বাংলাদেশ এবারের বর্ষায় ব্যাপক আকারে বন্যাকবলিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বিল্ট এনভায়রনমেন্টের অ্যাডজাঙ্ক প্রফেসর ড. রাশেদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান বছরটি মাঝারি মানের লা নিনার বছর। এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এবং বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরলজিক্যাল অরগানাইজেশন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে স্বাভাবিক এবং স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮ এবং ২০২২ সালের মহাসাগরীয় এবং বায়ুমণ্ডলীয় প্যারামিটারগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা ছিল অনেকটাই ১৯৮৮ সালের মে থেকে আগস্ট মাসে সাগরের তাপমাত্রার মতো। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের এই অঞ্চলকে নিনো অঞ্চল বলে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের সাগরের তাপমাত্রার পরিবর্তনে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অতিবৃষ্টি অথবা কমবৃষ্টি এবং বন্যা অথবা খরা হয়। বাংলাদেশেও বন্যা এবং খরা হওয়ার পেছনে এটি অন্যতম কারণ।
এখন যদি আগামী তিন মাস নিনো অঞ্চলের তাপমাত্রা বর্তমান সময়ের মতো বলবৎ থাকে তাহলে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা থেকে যায়। ক্লাইমেট সেন্টারগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন মাস নিনো অঞ্চলের তাপমাত্রা এভাবেই বলবৎ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যদি সম্ভাব্যতার স্কেলে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বন্যার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ।
তথ্য-উপাত্তে যে আভাস দেয়া হয়েছে তা আমলে নিয়ে বলা যায়, এবার দেশে বড় বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলে বর্ষার আগেই একটি বন্যা হয়ে গেছে। সঙ্গত কারণে বড় বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়াই হবে আমাদের বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে জনদুর্ভোগ কমবে। তা না হলে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়বে বৈ কমবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা