২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যুদ্ধের কারণে সার সঙ্কটের আশঙ্কা

-

কৃষি এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। করোনাকালেও দেশের কৃষিই একমাত্র খাত যা মহামারীর আগের মতোই গতিশীল ছিল। ফলে দেশে খাদ্যশস্যের জোগানে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা কিংবা টান পড়েনি। কিন্তু সামনে সার সঙ্কটে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমাদের প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ধান, আলু ও সবজি চাষে গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। দেশ দু’টি পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞায় পড়ায় এখন এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তায় দেশে সারের সঙ্কট হতে পারে বলে মার্কিন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দিকে, ভর্তুকির চাপ সামলাতে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকারি সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি- এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে। উল্লিখিত চারটি প্রধান সার কৃষকের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে থাকে সরকার। সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিনগুণের বেশি- প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।


যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মওসুমে ধান, গম ও রবি মওসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মওসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মওসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ে সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সাথে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এমনিতেই চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সারের কারণে নতুন করে আর যাতে সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য অন্যান্য খাতে সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, অর্থাভাবে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কৃষক এখন সার কেনার সামর্থ্য রাখে না। মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার যে শঙ্কা করা হয়েছে, সারের সঙ্কট হলে অথবা অতিরিক্ত দাম হলে সেই শঙ্কা বাস্তবে দেখা দিতে পারে।
বাস্তবতা হলো, বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরো কঠিন হতে পারে। তাই ভর্তুকি সত্ত্বেও দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ঠিক রাখতে যেকোনোভাবেই হোক সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প আপাতত আছে বলে মনে হয় না। একই সাথে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে খাদ্যশস্য নিয়ে বিপাকে পড়তে হতে পারে আমাদের। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার যে নমুনা তাতে ঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement