গণতন্ত্র বিকাশে গুরুত্বারোপ
- ২৩ মে ২০২২, ০১:২৫
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে সমালোচনা রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী র্যাব এবং এর কয়েকজন সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পশ্চিমা বিশ্বের মনোযোগ এ বিষয়ে আরো বেড়েছে। গত শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে বাংলাদেশের এক যৌথ বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। অন্য দিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য আরেকটি মনোযোগের বিষয় হয়ে উঠছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র। ওই বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চর্চা হয়ে আসছে। ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটলেও মানবাধিকারের এমন অবনতি ও মানুষের ভোটের অধিকার এভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়নি। এ অবস্থায় বাংলাদশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে পশ্চিমাদের গুরুত্বারোপ জনগণের স্বার্থ উদ্ধারে ইতিবাচক হবে আশা করা যায়।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ইইউর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে নাগরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শঙ্কার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, সরকারি বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু ও ভয়ভীতি প্রদর্শন। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ওপর সরকারি বাহিনী ক্রমবর্ধমান হারে চড়াও হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকালে এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বহুগুণে বেড়ে যায়। বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে এ লক্ষণ স্পষ্ট দেখা গেছে। তারই সূত্র ধরে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অথচ ভুক্তভোগীরা দেশে এ নিয়ে কোনো প্রতিকার পাচ্ছিলেন না। এমনকি তা প্রকাশ করার পথও পাচ্ছিলেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের দায়বোধের বিষয়টি ইইউ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক চুক্তি, অঙ্গীকার ও বিধিবিধান মানার বাধ্যবাধকতার কথা বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে।
গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান নির্বাচনব্যবস্থা এ দেশে এখন নির্বাসনে। ইইউ এ পর্যায়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করল। বিগত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে না। যদিও স্থানীয় সরকারের বেশির ভাগ নির্বাচনও অর্থহীন হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বেশির ভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সরকারদলীয় প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলোতে দেখা গেছে ভুতুড়ে সব ভোটের ফল। অন্য দিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী দলের সাথে মূলত একটি প্রতারণা করা হয়। ভোট গ্রহণের আগের রাতে সরকারি দল ভোটের বাক্স ভর্তি করে রাখে। ফলে এ নির্বাচনেও একচেটিয়া প্রায় সব আসনে তারা জিতে যায়। বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় এই অরাজকতা সবার জানা। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আরোপে সরকারের প্রস্তাবিত আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ, আইনের শাসনের অবনতি নিয়ে বৈঠকে ইইউ আলোচনা করেছে। এগুলো বর্তমান নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবতা হলোÑ বর্তমান সরকার চায় সবকিছু নিজের কব্জায় বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি এক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। দেশে দেশে গণতন্ত্র বিভিন্নভাবে ক্ষয়িষ্ণু। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা এর পুনরুদ্ধারে একধরনের সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ ভোটব্যবস্থা। বাংলাদেশে এর করুণ চিত্র দেখে পশ্চিমারা চিন্তিত। তাই তারা একযোগে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়। সুষ্ঠু ভোটব্যবস্থা ফিরে এলে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন ও সহযোগিতাকে সানন্দে স্বাগত জানাবে সাধারণ মানুষ। তার আগে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি দরকার। বিশেষ করে গুরুতর অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য দরকার একটি স্বাধীন কমিশন গঠন। এখন পর্যন্ত এমন কমিশন গঠনের কোনো উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় মানবাধিকার ও ভোটব্যবস্থা দুটোকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা