২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সাংসারিক ব্যয় মেটাতে পেরেশান

সাধারণের পিঠ এখন দেয়ালে

-

থাকা, খাওয়া, পরা, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াতের মতো নিত্যদিনের অপরিহার্য বিষয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সব শ্রেণীপেশার মানুষের সংসার জীবনের অঙ্ক আর মিলছে না। বাড়তি খরচের চাপে দেশের সাধারণ মানুষ এখন দুর্বিষহ সময় পার করছেন। সব কিছুর ব্যয় নিয়ে যখন নাভিশ্বাস, তখন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষজন ব্যয়সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবু অনেকেই খরচের চাপ সামলাতে নিরুপায় হয়ে ঋণের জালে জড়াচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনে ছন্দপতন ঘটাই স্বাভাবিক। কারণ, আয় না বেড়ে ক্রমাগত ব্যয় বাড়লে এটি অনিবার্য। সংসার খরচ মেটাতে হন্যে হয়ে মানুষ বাড়তি আয়ের উৎস খুঁজছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য মতে, গত মার্চ শেষে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। গত বছরের মার্চে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে, গত মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। গ্রামীণ পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি আরো বেশি। গত মার্চে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ আর খাদ্যে ছিল ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। বিবিএস বলছে, খাদ্য, পানীয়, পোশাক, জ্বালানি, আসবাব, চিকিৎসা ও অন্য স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াত, বিনোদনসহ সব ক্ষেত্রেই মানুষের খরচ আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। যদিও দেশের অর্থনীতিবিদরা বিবিএসের উল্লিখিত পরিসংখ্যানের সাথে একমত নন। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরো বেশি বলে তারা মনে করেন। কারণ, মার্চের পরে এসে ভোজ্যতেল, আটাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া বেড়েছে। ফলে এপ্রিল ও মে মাসে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
বাস্তবে জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে আয় বাড়েনি। বিবিএসের মজুরি সূচকের তথ্যানুযায়ী, গত মার্চে সারা দেশে গড় মজুরি সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ ও শিল্প খাতে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। তবে শিল্পের মধ্যে নির্মাণ খাতে মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে কম। শ্রমনির্ভর এ খাতে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। উৎপাদন খাতে মজুরি বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সেবা খাতে বেড়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে নিত্যদিনের জীবনযাপনের সাথে জড়িত পণ্য ও সেবার দাম ৩ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যে দাম বেড়ে যাওয়ার হার আরো বেশি। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি, বরং বিপুলসংখ্যক মানুষের আয় কমেছে। বিশেষ করে করোনার দুঃসময়ে কাজ চলে যাওয়া বা ব্যবসায় হারানো মানুষ নিদারুণ সঙ্কটে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সবার আয় আগের ছন্দে ফেরেনি। অবস্থা এমন যে, সাধারণ মানুষ আগে যে ধরনের ও পরিমাণে পণ্য কিনতেন, বর্তমান সময়ে পরিমাণে কম এবং নিম্নমানের জিনিসপত্র কিনছেন।
করোনা-পরবর্তী বাড়তি চাহিদা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পণ্যদর বেড়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায়ে সরকার পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করলেও বাজারে শক্তিশালী তদারকি না থাকায় এসব উদ্যোগ মানুষের তেমন উপকারে আসছে না। লক্ষণীয়, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। এ রকম অস্বাভাবিক সময়ে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি, কিন্তু তা করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারের এই ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আমরা বলতে চাই, সরকার যেসব নীতি-সুবিধা দিচ্ছে, সেগুলো যাতে টার্গেট গ্রুপ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অসাধু কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এ জন্য বাজার তদারকি জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। তবে বাজারব্যবস্থার দুর্বলতা, অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ঠেকানোর আপাতত কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement