জালিয়াতির প্রতিটি ঘটনার বিচার হোক
- ১৪ মে ২০২২, ০০:০০
দেশে প্রতারণার ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের অর্থ লোটার প্রথম বড় ঘটনায় ডেসটিনির নাম বিশেষভাবে আলোচিত। সমবায়ভিত্তিক মাল্টিপারপাস পদ্ধতির অপব্যবহার করে অর্থ লুটপাট হওয়ার পরই কেবল আমাদের রাষ্ট্র্রীয় আইন-কানুন সক্রিয় হয়। গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ডেসটিনি গ্রুপের সমুদয় সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য ৫৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্রাহকরা পাবেন ১৪ হাজার কোটি টাকা। দুর্ভাগ্য হলো, একটি বড় জালিয়াতির নজিরের পরও একই ধরনের আরো কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনা বর্তমান সরকারের সময়ে ঘটেছে। চাতুরী করে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর সরকার প্রতারকদের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসে। এমন জালিয়াতি যে এখনো হচ্ছে না; তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অথচ সরকারের দায়িত্ব নাগরিকদের জান-মালের সুরক্ষা দেয়া।
২০১২ সালে ডেসটিনির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করে। অবশেষে মামলার রায়ে ৪৬ আসামির সবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড হয়েছে। অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ডেসটিনির পরিচালকরা কমিশনের ভিত্তিতে বাইনারি পদ্ধতিতে কেনাবেচার কৌশল অবলম্বন করেন। এর আগে কোম্পানিটি পণ্য বিক্রির ব্যবসায় ব্যর্থ হয়। ২০০৫ সালে সমবায় অধিদফতর থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (ডিএমসিএল) নামে নিবন্ধন নেয়। যদিও এ আইনে কমিশনের ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহের সুযোগ নেই। সীমা ছাড়া লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে আট লাখ মানুষের কাছ থেকে এক হাজার ৯৩৫ কোটির টাকার বেশি বিধিবহির্ভূতভাবে সংগ্রহ করে। এই অর্থ নিজেদের তৈরি করা নামমাত্র কোম্পানিতে বিনিয়োগ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। এখন ডিএমসিএলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৫০ লাখ টাকা আছে। অভিযোগপত্রে উল্লেøখ করা হয়, এমএলএম প্রতারণামূলক একটি পদ্ধতি।
রায়ে ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আলমকে ১২ বছর ও কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদের চার বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রফিকুল উদ্যোক্তা পরিচালক। শুরু থেকে এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। যেনতেনভাবে অর্থ উপার্জন করাই যে তাদের উদ্দেশ্য ছিল আদালতের রায়ের পর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। জেনারেল হারুন ২০০০ সালের অক্টোবরে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। পরে কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হন। তিনি এই চক্রের অর্থ সড়ানোর জালিয়াতিতে সহযোগিতা করেছেন বলে সাক্ষ্য প্রমাণে উঠে এসেছে।
বর্তমানে দেশে অনিয়ম দুর্নীতি লুটপাট যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। অপরাধীদের একটি সাধারণ অপকৌশল হচ্ছে তারা সামনে এমন সব ব্যক্তিকে রাখতে চান, যাদের ভাবমর্যাদা কাজে লাগে। এর আড়ালে যাবতীয় জালিয়াতি করা সহজ হয়। জেনারেল হারুন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিয়েছেন। তার পদবিও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, যা অনাকাক্সিক্ষত।
ডেসটিনি বিলুপ্ত ঘোষণা করে আদালত রায়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে বিনিয়োগ করে যারা নিঃস্ব হয়েছেন; জরিমানার অর্থ আদায় করে তাদের মধ্যে যথাযথ বণ্টনে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের যত সম্পত্তি জব্দ রয়েছে, রাষ্ট্রের অনুকূলে তা বাজেয়াপ্তের নির্দেশও দেয়া হয়েছে। আদালত রায়ের মাধ্যমে প্রতারিত মানুষের প্রতিকার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখন বাদবাকি কাজ সঠিকভাবে পালনের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায়, সরকার গঠিত কমিটি ঠিকভাবে কাজ করে না কিংবা নিজেদের পছন্দের প্রাধান্য, আত্মীয়তা ও দলীয় সম্পর্কের বিবেচনায় কাজ করে। এবার এমনটি যেন না হয়। একই সাথে ডেসটিনির পর যতগুলো মাল্টিপারপাস জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে দ্রুততার সাথে সবগুলোর উপযুক্ত বিচার সম্পন্ন হওয়া দরকার। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একটি ঘটনাও যেন দেশে আর না ঘটে সে জন্য সরকার আইনানুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে এমনটিই সবার প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা