ইসরাইলিদের শাস্তি হবে কি
- ১৩ মে ২০২২, ০০:০০
ইসরাইলি বাহিনী তাদের বেপরোয়া দখলদারি নির্বিঘ্ন করতে এবার এক সাংবাদিককে হত্যা করেছে। জেনিনে একটি ফিলিস্তিনি বসতিতে উৎখাত অভিযান চালনোর আগমুহূর্তে তাকে হত্যা করা হয়। তিনি তখন উৎখাতের ঘটনার ওপর প্রতিবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০০১ সালের পর এ পর্যন্ত ইসরাইলি দখলদার বাহিনী ৫০ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে। গত চার বছরে তাদের হামলায় ১৪৪ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। পেশিশক্তি ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করতে ইসরাইলের খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না। তারপরও মানবতাবিরোধী নির্মম অভিযানগুলো যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে করা যায় সে জন্য সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্যই ইসরাইল সাংবাদিকদের হত্যা করে।
আলজাজিরার আরবি ভার্সনের অত্যন্ত জনপ্রিয় সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। সহকর্মীরা আরব ও ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ‘আদর্শ’ বলে তাকে অভিহিত করছেন। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি পূর্ণ বিশ্বস্ততা ও পেশাদার ছিলেন। তিনি ২৫ বছর ধরে এ চ্যানেলের জন্য কাজ করেছেন। দুই যুগের বেশি সময়ে তিনি আরব বিশ্বের ঘরে ঘরে প্রিয় একটি নাম। এই সাংবাদিকের জন্ম ১৯৭১ সালে জেরুসালেমে। শৈশবে মা-বাবা হারানো শিরিন নিজ দেশের মানুষের দুর্দশা কাছে থেকে দেখেছেন। পড়াশোনা করেছেন সাংবাদিকতায়। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন। আলজাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক তার মৃত্যুর পর এক বিবৃতিতে শিরিনের হত্যাকে ‘নির্লজ্জ খুন’ এবং একটি ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি নিরাপত্তাবাহিনী তাকে হত্যা করেছে। এজেন্সি ফ্রান্স প্রেসের (এএফপি) এক ফটো সাংবাদিক একইভাবে জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। অকুস্থলে থেকে এমন সাক্ষ্য আরো অনেকে দিয়েছেন। ইসরাইলের মুখপাত্র জানাচ্ছেন, এখনো জানা যায়নি এ হত্যাকাণ্ডের দায় কার। তাদের পক্ষ থেকে আবার দাবি করা হচ্ছে- ফিলিস্তিনিদের গুলিতে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ দাবির পক্ষে স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সমর্থন মেলেনি। শিরিনের পাঠানো সর্বশেষ লিখিত বার্তাটি আলজাজিরা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি ১১ মে সকালে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানস্থলের কাছাকাছি রয়েছেন। স্পষ্ট কোনো ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারলে সরবরাহ করার আগাম খবর তিনি সেই বার্তায় জানান।
ইসরাইল একের পর এক ফিলিস্তিনি বসতি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা এখন ইসরাইলের জন্য ডালভাত। এসব খবর শিরিনদের মতো সাংবাদিকদের কল্যাণে বিশ্ববাসী এতদিন জানতে পেরেছে। তাই ইসরাইলের জন্য এখন দরকার সাংবাদিকদের দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়া। সাহসীদের খুন করা হলে অন্যরা ভয় পাবে এটা নিশ্চিত। তবে একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক হত্যার প্রতিক্রিয়া হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ইউনেস্কোও একই দাবি জানিয়েছে। বলা হয়েছে, শিরিনের গায়ে ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট ছিল। এই হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-সহ অন্যান্য সংগঠন গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।
ইসরাইল নিজেও এ ঘটনায় তাদের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ইতিহাস বলছে, মূলত ইসরাইলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনকানুন অকার্যকর। প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের যত অন্যায় অনিয়ম আছে সব চোখ বুজে এড়িয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবও আনা যায় না। খোদ যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় একজন সাংবাদিক হত্যার ঘটনা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হয়তো হতে পারে; কিন্তু দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রত্যাশা করাটা দুরাশা। যে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাকে বিচারের আওতায় আনলে ইসরাইলের আগ্রাসী অবস্থান দুর্বল হবে। সেটি তারা কখনো হতে দেবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা