২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঐতিহাসিক মে দিবস আজ

শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক

-

প্রতিটি সভ্যতার ভিত্তিভূমি গড়ে ওঠে শ্রমজীবীর শ্রম-ঘামে। কিন্তু শ্রমজীবীরা সবসময়ই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। শিল্পবিপ্লবের ঊষালগ্ন থেকেই শ্রমিকবঞ্চনা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। শ্রমজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। উনিশ শতকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে ঘটে সহিংস ঘটনা।
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের আত্মত্যাগের সেই ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে পালন করা হয় ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’। ওই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, শ্রমিকের দৈনিক আট কর্মঘণ্টার অধিকার প্রতিষ্ঠা। এ দাবিতে সে দিন শ্রমিকরা ‘হে’ মার্কেটে জমায়েত হলে তাদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাত ব্যক্তি বোমা নিক্ষেপ করে। এর পরই পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে ১০-১২ জন নিহত হয়।
১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকে’র প্রথম কংগ্রেসে প্রস্তাব করা হয়, ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগোর ঘটনার প্রতিবাদবার্ষিকী দেশে দেশে পালন করা হবে। ১৮৯১ সালে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। এরপর অনেক দেশেই মেহনতি মানুষের দাবির ফলে মে মাসের ১ তারিখ সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ ৮০টি দেশে দিনটি যথাযথভাবে পালন করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে ‘শ্রম দিবস’ পালন করা হয় সেপ্টেম্বরে। বাংলাদেশে বিভিন্ন দিবস পালন যেভাবে আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হয়েছে, তেমন অবস্থা মে দিবসেরও।
শ্রমজীবী মানুষের ভাবনার মূল বিষয় কর্মসংস্থান ও ন্যায্য মজুরি। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে শিল্প ও সেবা খাতে অব্যাহত কর্মসংস্থানের পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত এক দশকে এতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। কৃষি খাতে প্রায় প্রতি বছরই ভালো ফলন হচ্ছে; কিন্তু খাদ্য উৎপাদনে যারা শ্রম দিচ্ছে, সেই কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলিয়েও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে শ্রমজীবী অন্যান্যের ওপরও। দেশের বাইরে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে বাংলাদেশের দরিদ্র ও বেকার তরুণরা শ্রম বিক্রি করতে দলে দলে যাচ্ছেন নিজেদের শেষ সম্বল বিক্রি করে। কিন্তু সেখানে বৈরী পরিবেশে কাজ করার পরও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত তারা। যে অর্থ খরচ করে প্রবাসে শ্রমিকরা যাচ্ছে, সে পরিমাণ টাকা আয় করা ভিসার মেয়াদে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা বিধানে তবু রাষ্ট্রকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোক নতুন করে শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। অথচ দেশে নতুন কর্মসংস্থান তেমন সৃষ্টি হচ্ছে না। এতে অনানুষ্ঠানিক খাতের লাখ লাখ শ্রমজীবীর জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এ অবস্থায় দেশে বেকার ও আধা বেকারের সংখ্যা যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনি নৈরাশ্য আর সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ে মাদকের আসক্তি বাড়ছে যুবসমাজের মাঝে। এতে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমশক্তির হচ্ছে বিপুল অপচয়।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শ্রমজীবীদের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান ও ন্যায্য মজুরি আগে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ অপরিহার্য। সর্বপ্রথম প্রয়োজন দেশে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। একই সাথে ঘুষ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে কর্মরত শ্রমজীবীদের পাশাপাশি প্রবাসীদের অধিকার ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল