আইন তখন নীরব
- ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
নিউমার্কেটে সংঘর্ষে দু’জন সাধারণ মানুষের প্রাণহানি, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর ও বিপুল সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি কারা করেছে এ ব্যাপারে সারা দেশের মানুষ জেনে গেছে। নাহিদকে কুপিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যাকারীদের পরিচয় সবার সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না বা ‘খুঁজে পাচ্ছে না’। অথচ ঘটনার পরপরই প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলার প্রধান আসামিসহ অনেকে গ্রেফতার হয়ে গেছেন। পুলিশের রিমান্ড আদায়ও হয়ে গেছে যদিও এসব অপরাধ যে, তারা করেছেন সে ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার কোনো লক্ষণও প্রকাশ পায়নি। সারা দেশে প্রতিদিন খুন, সন্ত্রাস, লাগামহীন চাঁদাবাজি ও বেআইনি কর্মকাণ্ড কেন দেদার চলছে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। গুরুতর অপরাধ সংঘটনের পর পুলিশ যদি তার হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করার সুযোগ খোঁজে মানুষের দুর্ভোগ সামনে আরো বাড়বে।
পত্রিকায় একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে প্রকাশিত অডিওর কথোপকথন থেকে বোঝা যাচ্ছে নিউমার্কেটসহ সম্প্রতি ঘটা আরো কিছু সন্ত্রাসী ঘটনার সাথে যুক্ত রয়েছে একটি গ্রুপ। যারা এসব করছে কথাবার্তায় তাদের ক্ষমতা ও ঔদ্ধত্য প্রকাশিত হয়েছে। তারা সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন করতে চায়। এর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় আধিপত্যের হিস্যা আদায় করতে চায় প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য গ্রুপের কাছ থেকে। অস্ত্র ও পেশিশক্তি ব্যবহারের উদ্দেশ্যও সেই কথোপকথনে উঠে এসেছে। ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট নেতার নামও তারা উল্লেখ করেন। মোবাইলের এক প্রান্তের জন ঢাকা কলেজের আন্তর্জাতিক হলে, অপরজন নর্থ হলে থাকেন। তার আগেই নাহিদকে হত্যার নৃশংস দৃশ্যটি সিসিটিভিতে দেখা গেছে। হত্যাকারীরা ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। শেষ পর্যন্ত এ হামলায় অংশগ্রহণকারী ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের একজনও গ্রেফতার হননি। তবে তাদের কয়েকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে আবার ছেড়ে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সাথে যুক্ত অপরাধীদের প্রতি পুলিশের এমন নমনীয় আচরণ এখন সাধারণ ব্যাপার। প্রতিদিন ছাত্রলীগ খুন-সন্ত্রাসসহ অসংখ্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। গত রোববার সাতক্ষীরা কলেজের এক ছাত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। তাকে ছাত্রলীগ নিজেদের টর্চার সেলে পাঁচ ঘণ্টা আটক করে রাখে। বিবস্ত্র করে, মাথা ন্যাড়া করে ভিডিও ধারণ করেছে। নির্দয় মারধর করে সেই ভিডিও দেখিয়ে পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে। প্রতিদিন এমন নৃশংসতার অসংখ্য অভিযোগ ছাত্রলীগ নামধারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ আগাগোড়া অপরাধীদের একটি আশ্রয়স্থলে পরিণত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে। একটি বৈধ আশ্রয়ে থেকে তারা অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে; কারণ রাষ্ট্র থেকেও তারা আনুকূল্য পাচ্ছে। এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি এর দায় রয়েছে মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির। সরকার নিজের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ব্যবহার করছে। এটি পুরনো কিছু নয়। নিউমার্কেটে মূলত ঢাকা কলেজ ছাত্রদের আড়ালে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তারা সেখানে চাঁদাবাজির এক রাজ্য গড়ে তুলেছে। শুরুতে ছাত্রলীগের এ আক্রমণকে আড়াল করা চেষ্টা করেছে সবাই মিলে। ভিডিওচিত্র পরে নিশ্চিত করছে কলেজে আশ্রয় নিয়ে থাকা ছাত্রলীগ নৃশংস ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী। মিডিয়া ও নাগরিক সমাজ যদি অপরাধের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে একে আড়ালের কাজে আঞ্জাম দেয় তার সুযোগ সরকারসংশ্লিষ্টরা নেবে। ইতোমধ্যে সারা জাতি এদের কাছে অনেকটাই জিম্মি হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে কেউই তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে রক্ষা পাবে না। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সোচ্চার হওয়া উচিত। অপরাধ করলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যাতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। নিউমার্কেটে হামলায় শনাক্ত হওয়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমরা মনে করি, দলীয় বিবেচনায় আর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। সরকারকেও বিষয়টি সেভাবে বিবেচনা করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা