নাগরিক সমস্যাও বলা বারণ!
- ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
সারা দেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের সঙ্কট তীব্র। বাস্তবতা হলো, শহরে মাঠের অভাবে শিশু-কিশোররা সারা দিন ঘরবন্দী থাকে। আর রাজধানী ঢাকায় দিন দিন খোলা জায়গাগুলোতে নানা অবকাঠামো গড়ে উঠছে। ফলে এই শহরে শিশুদের খেলার মাঠ একেবারেই কমে গেছে। ফলে শিশু-কিশোররা যেমন খেলাধুলার সুযোগ না পেয়ে সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে না, তেমনি খেলাধুলার ব্যস্ততা না থাকায় অলস সময়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। দেশব্যাপী কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এটিও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ অবস্থায় রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা নামে পরিচিত একটি খেলার মাঠে কলাবাগান থানার স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করায় তখন থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন এলাকাবাসী। এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর বক্তব্য, ওই এলাকায় শিশুদের জন্য খেলার মাঠ একটিই। সেখানে গত রোববার থানা ভবনের স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হলে এর প্রতিবাদ এবং তার ভিডিও ধারণ করেন এক নারী। এই ‘অপরাধে’ পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তার কলেজপড়–য়া ছেলে এলে তাকেও আটক করা হয়। পুলিশের এমন কাণ্ডে প্রতিবাদে সোচ্চার হন মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশবাদী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বহু মানুষ। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, অবশেষে ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রেখে হেনস্তার পর এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে মাঠ রক্ষার আন্দোলন আর করবেন না মর্মে মুচলেকা নিয়ে মা-ছেলেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তবতা, কোনো যৌক্তিক প্রতিবাদ করলেও পুলিশ এতে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র দেখতে পায়। পুলিশ প্রশাসন সরকারবিরোধী সব আন্দোলন যেমন বল প্রয়োগ করে বন্ধ করতে চায়; ঠিক একইভাবে নাগরিক সমস্যা নিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিবাদও দমাতে কসুর করে না। এক্ষেত্রে পুলিশের বাড়াবাড়ি সময়ে সময়ে সীমা অতিক্রম করে; এমনকি আইন অনুযায়ী কিংবা বিধি অনুযায়ী সম্পাদিত হয় না।
ভিন্নমত দমনে পুলিশকে বাড়াবাড়ি রকমে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বিগত এক যুগ ধরে দেশে সাধারণ নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দমবন্ধ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এখন নাগরিক সমস্যা নিয়ে কথা বললেও মানুষজনকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। বিপদ এড়াতে সাধারণ মানুষ সব ধরনের প্রতিবাদ এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছে। তবে এমন দুঃসহ পরিস্থিতি কোনো সমাজে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আমরা মনে করি, অবাধে যে কাউকে মতপ্রকাশের সুযোগ দিলে সামাজিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকে।
কলাবাগানে পুলিশ মা-ছেলেকে আটক করে স্পষ্টতই নাগরিক অধিকার খর্ব করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ছেড়ে দিয়ে মন্দের ভালো করেছে। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের মতো আমরাও মনে করি, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুলিশ যেমন আটক মা-ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে, তেমনি বিকল্প খেলার মাঠ না দেয়া পর্যন্ত ওই মাঠে থানার ভবন নির্মাণ থেকে বিরত থাকবে। কারণ, বিকল্প মাঠের ব্যবস্থা না করে থানা ভবন নির্মাণ করা হবে অযৌক্তিক। খেলার মাঠ না থাকায় খেলতে না পেরে শিশুরা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় কোনো বিবেকবান নাগরিক চিন্তিত না হয়ে পারেন না। আমরা কেউ একটা অপরাধী সমাজ চাই না। তাই দেশের প্রতিটি এলাকায় শিশু-কিশোরদের সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার স্বার্থে খেলার মাঠ অতীব জরুরি। বেশি মাঠ থাকলেই বরং অপরাধ কমবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা