বিচারের বাণী যেন নিভৃতে কাঁদছে
- ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
একজন-দু’জন নন। মারা যান এক হাজার ১৩৮ জন। বহু মানুষ নিখোঁজ হন। আহত হন প্রায় আড়াই হাজার। তাদের মধ্যে শত শত চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। কোনোরকম কাজকর্ম করে বেঁচে থাকার অবস্থাও তাদের নেই। এটি হলো ২০১৩ সালে সাভারের রানাপ্লাজা ধসের ঘটনার পরিণতি। ভবনটি সবার অজান্তে ধসে পড়েছিল এমন নয়। ওই ভবনে ফাটল ধরার খবর জেনে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল সেখানে পরিদর্শনে যায়। ওই দল যথারীতি ভবন মালিককে সতর্ক করে এবং গার্মেন্ট কারখানাগুলো বন্ধ রাখার সুপারিশ করে। কিন্তু ভবন মালিক ও সেটিতে অবস্থিত পাঁচটি গার্মেন্ট কারখানার মালিকরা সেই পরামর্শ না মেনে জোর করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। সুতরাং দুর্ঘটনা এবং পুরো পরিণতির জন্য দায়ী কারা তা না বোঝার কোনো কারণ নেই।
গতকাল ছিল রানাপ্লাজা ধসের নবম বর্ষপূর্তি। এদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে উদ্বেগজনক নানা তথ্য। জানা গেল, এতজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই। মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ দুর্ঘটনায় তিনটি আলাদা মামলা হয়েছিল। তিন মামলার কোনোটিরই বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি।
হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত দুই আসামি মারা গেছেন। তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে কারাগারে আছেন শুধু রানাপ্লাজার মালিক সোহেল রানা। সাতজন পলাতক। জামিনে আছেন ৩১ জন। এসব তথ্য সত্যিই পীড়াদায়ক। এটি মানুষের জীবনের মূল্যহীনতা প্রমাণ করে। একই সাথে হতাহত ও নানাভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার খর্ব করে।
খবরে আরো জানা গেছে, মামলার তদন্তে সময় গেছে দুই বছর। ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দেয়নি সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হতে (অভিযোগ গঠন) সময় লেগেছে আরো এক বছর। বিচার শুরুর আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সাত আসামি উচ্চ আদালতে গেলে তাদের পক্ষে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে। ওই স্থগিতাদেশের কারণে পাঁচ বছর ধরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ ছিল।
দেশে বিচার-ব্যবস্থা এবং মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কোনো অবস্থায় আছে এই একটি ঘটনাই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে যথেষ্ট। এখানে রাষ্ট্রপক্ষের নেতিবাচক ভূমিকা আলাদা করে উল্লেখের প্রয়োজন আছে মনে হয় না।
এত বড় একটি দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণের কোনো উদ্যোগ সরকারি তরফে নেই। শ্রমিকদের একটি সংগঠন গত শনিবার রানাপ্লাজার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ধসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি, ২৪ এপ্রিল শোক দিবস ঘোষণা, শ্রমিক হত্যার বিচার, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং শ্রমিকদের জন্য কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা এ বিষয়ে সরকারের ন্যূনতম তৎপরতা না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেন।
নিহতদের পরিবারগুলো এবং আহত ও পঙ্গু মানুষেরা বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। হতাহত পরিবারের স্বজনরা বলছেন, তাদের কেউ স্ত্রী, কেউ স্বামী বা পিতা-মাতা ও সন্তান হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর ব্যথা যে কত ভয়াবহ ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ তা বুঝবেন না। এ বেদনা সারাজীবন তাদের বয়ে বেড়াতে হবে। তবে বিচার পেলে ওই বেদনার খানিকটা প্রশমন হতো। অথচ ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো পথ চেয়ে আছেন বিচারের আশায়। কিন্তু গত ৯ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, এত দিন অপেক্ষা করেও এর কোনো সুরাহা তারা পাননি। কবে হবে তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। আমরা সবাই বিস্মিত এই ভেবে যে, কোনো সভ্য সমাজ এ ধরনের বিচারহীনতা মেনে নিতে পারে তা অবিশ্বাস্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা