দহগ্রামবাসীর দুর্ভোগের অবসান কাম্য
- ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
বহুলালোচিত বাংলাদেশী ছিটমহল দহগ্রাম। বাংলাদেশ ১৯৭৪-এ তার মিত্ররাষ্ট্র ভারতকে বেরুবাড়ি ছিটমহল দিয়ে দেয়ার দীর্ঘকাল পরে দহগ্রাম পেয়েছে তবে তা আজো নানা বিধি-নিষেধের শিকার। নয়া দিগন্তের এক সচিত্র প্রতিবেদনে পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) সংবাদদাতা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন এবার।
আলোচ্য সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় দহগ্রামের অবস্থান। এ ইউনিয়নের আয়তন ২২ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ২০ হাজারের মতো। তিস্তা নদী এর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। বিশাল ভারতবেষ্টিত দহগ্রামের একমাত্র প্রবেশপথ হচ্ছে, বহুল পরিচিত তিন বিঘা করিডোর। কেবল এটা দিয়েই বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করা যায়। এ গেট এখন সর্বদা খোলা থাকলেও আজো এর নিয়ন্ত্রক ভারতীয় সীমান্ত সেনা বিএসএফ। ফলে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি ও নিজ দেশে যাতায়াতের বেলায়ও মানুষকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভারতের সীমান্তরক্ষীদের নানাবিধ নিয়ম কানুনের সাথে যোগ হয়েছে স্বদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হয়রানি। এ ক্ষেত্রে, সর্বাধিক ভোগান্তি ঘটছে গৃহপালিত পশু বিক্রেতাদের। বিএসএফ তাদের দৃষ্টিতে ‘অতিরিক্ত’ হলে কোনো পশুকে বাংলাদেশে বেচতে নিয়ে যেতে দেয় না। দহগ্রাম ইউপিতে প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার ৩০টি করে মোট ৬০টি গরু বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে। এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসা, একই বাংলাদেশে এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ডে গৃহপালিত পশু গরু পর্যন্ত নিতে কেন ভারত বা অন্য দেশের অনুমতি লাগে? তদুপরি অভিযোগ, দহগ্রাম থেকে খাওয়ার গোশত আনতেও ‘হয়রানি’ করছে বিজিবি। সপ্তাহে মাত্র দুই দিন, রোববার ও বৃহস্পতিবার গরু বেচার জন্য পাটগ্রাম সদর হাটে নেয়া যায়। দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের উপস্থিতিতে সেগুলো তিন বিঘা করিডোর অতিক্রম করতে পারে। জানা যায়, আসলে দহগ্রামের গো-খামারি অসংখ্য। এখানে প্রায় প্রত্যেক কৃষক গরু পালন করে থাকেন ৮-১০টি করে। অন্যদিকে, অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য কিংবা কারো বিয়েতে পশু বিক্রি করার অনুমোদনও পাওয়া যায় না। স্থানীয় গুচ্ছগ্রামের জনৈক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘মেয়ের চিকিৎসায় গরু বেচতে পারিনি। মেয়েটাও মারা গেছে চিকিৎসার অভাবে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশেও কেন এমন পরাধীন? স্বদেশের একাংশ থেকে অন্য অংশে কী কারণে প্রয়োজনেও গরু নেয়া যায় না সহজে?’ দহগ্রামবাসী এক মহিলা বলেছেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অত্যন্ত কষ্ট করে গরু পালন করতে হয়েছে। কিন্তু তবুও এগুলো বিক্রি করা কঠিন। মাসকে মাস কেন এ জন্য অপেক্ষা করতে হয়? ফলে আমাদের সমস্যার অন্ত নেই।’ বাসিন্দারা জানান, ‘খাওয়ার গোশত নিয়ে এলে গেটের দু’পাশেই বিজিবির হয়রানি চলে। অথচ গাড়িতে করে কয়েক মণ গোশত আনলেও আটকানো হয় না।’ সম্প্রতি কয়েকজন মিলে দহগ্রাম থেকে গোশত আনার পথে ১০৬ কেজি গোশত নিলামে তোলার অভিযোগ রয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পরই নাকি দহগ্রামের গোশত গেছে বিজিবি মেসে। অবশ্য বিজিবি সূত্রের দাবি, ৯৭ কেজি নিলামে দেয়া হয়। এটা অভিনব কায়দায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।’ ‘সুবিধা না পেলেই’ মানুষ নানা অভিযোগ করে বলে বিজিবির বক্তব্য।
পাটগ্রামের ইউএনও জানান, ‘জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য খামারি ও গরু শুমারি চলছে। এতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সাথে রয়েছেন পুলিশ-বিজিবি, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বর প্রমুখ। এ শুমারির পর যদি দেখা যায়, ৩০´২= ৬০টি গরু অপ্রতুল, তা হলে এ ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ লাঘবের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
আমরা চাই, অবিলম্বে ছিটমহল দহগ্রামবাসীর যাবতীয় দুর্ভোগের অবসান হোক যাতে তাদের ‘স্বদেশেও পরবাসী’ হয়ে থাকতে না হয়। অন্যথায়, সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গত ক্ষোভের অন্ত থাকবে না। তারা তখন ভাবতে পারেন, দীর্ঘদিন পর হলেও বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তাদের কী লাভ হলো?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা