ভোগান্তির শেষ কোথায়
- ০৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
রাজধানীতে যানজট প্রতিদিনের বাস্তবতা; কিন্তু রমজানের প্রথম দিন থেকে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দুপুরের পর থেকে ইফতারের পরও যানজটে স্থবির থাকছে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক। অলিগলিতেও দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ১০ মিনিটের পথ যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। রোজা আর চৈত্রের তাপদাহে যানজটে অতিষ্ঠ জনজীবন। বহু মানুষ ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছতে পারছে না। কর্মজীবী নারীরা বাসায় ফিরে ইফতারি প্রস্তুত করবেন তা অভাবিত; বরং লাখো মানুষ রাস্তায় বিব্রতকর অবস্থায় ইফতার করতে বাধ্য হচ্ছে।
রাজধানীর অনেক এলাকায় সকালের দিকে যানজট কম থাকলেও বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানজট বাড়তে থাকে। বিকেল ৪টার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতষ্ঠান ছুটির পর যানজট ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছায়। আগের বছরগুলোতে রোজায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকত। এবার মহামারীজনিত বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রমজানেও স্কুল-কলেজ খোলা। সকালে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত শুরু হয়। যানজটের এটি অন্যতম কারণ। ঈদের কেনাকাটা শুরু হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ জানে না। রাজধানীবাসীর বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষের এখন একটিই প্রশ্ন- এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ১৫ বছরের ব্যবধানে এখন তা কমে সাড়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এটি গবেষণার হিসাব। বাস্তবে রাস্তায় চলতে গেলে গাড়ির গতি এর চেয়েও কম মনে হয়। সব মিলিয়ে ঢাকার সড়ক দিন দিন নিশ্চল হওয়ার পথে। এভাবে চললে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গাড়ির গতি শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছবে। বুয়েটের এক হিসাবে, এখন যানজটের কারণে ঢাকায় দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে বছর শেষে যানজটে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। একটি জাতি শুধু ব্যবস্থাপনার অভাবে বছরে এ বিপুল ক্ষতির শিকার হচ্ছে এমন দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল।
শুধু কর্মঘণ্টার ক্ষতি নয়, যানজটের কারণে ক্ষতির অনেক দিক রয়েছে। তীব্র গরম, বিপুল শব্দ ও বায়ুদূষণের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে যাত্রীদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ও মানসিক চাপ তৈরি হয়। সেখান থেকে শরীরে নানা রোগও বাসা বাঁধে। এসব রোগের চিকিৎসায় বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়। এভাবে কতটা ক্ষতি হয় তার হিসাব কেউ করেনি।
যানজট নিরসনে সরকার কী করছে জিজ্ঞাসা করা হলে কর্তাদের মুখে হাজারটা জবাব পাওয়া যাবে। গত এক দশকে ঢাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিশাল বিশাল উড়াল সড়ক নির্মাণ করেছে সরকার। উন্নত দেশের মেট্রোরেল হচ্ছে। হাতিরঝিলের নয়নজুড়ানো উন্নয়ন করা হয়েছে দুই সহস্রাধিক টাকা খরচ করে। ট্রাফিক-বাতি কেনা, ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও তা কোনো কাজে লাগছে না। আর বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর একটিও সময়মতো শেষ করতে পারেনি। এর ফলে ব্যয়ের সাথে পাল্লøা দিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে; কিন্তু রাজধানীর সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞরা সবার আগে যেসব বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তার কোনোটিই সরকার করেনি। বিশেষজ্ঞরা সবার আগে গণপরিবহন ব্যবস্থায় বাসের সংখ্যা বাড়ানো, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা, ঢাকা নগরীর চার পাশে রিং রোড তৈরি ও ঢাকার ভেতরে সড়ক সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন; কিন্তু সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পায় হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। তাতে জনগণের উপকার হোক বা না হোক, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যে উপকার হয় তাতে সন্দেহ নেই।
নগরবিদরা বলছেন, ঢাকা এখন ক্যান্সারের রোগী, যার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে আসছে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে এ শহরকে সচল রাখা যাবে না। অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে আপাতত এমন সম্ভাবনা আমাদের চোখে পড়ছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা