সরকারি তদারকি যথেষ্ট নয়
- ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
খাদ্যপণ্যের মান নিয়ে আমাদের দেশে ব্যাপক দ্বিধা রয়েছে। কোনো একটি খাদ্য খাঁটি কি না সেটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। এর দুটো দিক রয়েছে। একশ্রেণীর মানুষ যেনতেনভাবে লাভ করতে চায়। ফলে ভেজাল মিশিয়ে খাদ্যপণ্য তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দেয়। তারা বিক্রেতাদের বেশি লাভের সুযোগ করে দেয়। ফলে তারা কোনো ধরনের বিচারবিবেচনা ছাড়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্যপণ্য বাজারজাত ও বিক্রি করে। অন্য দিকে রয়েছে আমাদের উদাসীন সরকারি কর্তৃপক্ষ। তারা বাজারে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য বন্ধে যথেষ্ট তৎপর নয়। তার ওপর রয়েছে একটি সম্মিলিত অসাধু সিন্ডিকেট। সব মিলিয়ে বাজারে থাকা বাহারি রকমের খাদ্যপণ্যের বিশুদ্ধতা নিয়ে মানুষের আস্থা নেই। তবুও মানুষকে অস্বস্তির মধ্যে থেকে বাজার থেকে খাদ্য কিনতে হয়।
জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান দেশের খাদ্যপণ্যের মান নিয়ে বছর বছর পরীক্ষা করে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অর্থাৎ বছরব্যাপী তারা পরীক্ষা চালায়। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে খাদ্যের এক হাজার ১৩৩টি নমুনা তারা পরীক্ষা করে। এগুলোর মধ্যে এক হাজার ১৯টি নমুনা মানসম্পন্ন। তাদের পরীক্ষা অনুযায়ী বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে এমন ১০ শতাংশ খাদ্য মানসম্পন্ন নয়। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ৮৫ ধরনের খাদ্যের মান যাচাই করে। এবার তারা ৫৬ ধরনের খাদ্য যাচাই করেছে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা থেকে খাদ্য পরিদর্শকদের পাঠানো ৩৭৭টি নমুনা পরীক্ষার অনুপযুক্ত ছিল। জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের খাদ্য যাচাইয়ের গত বছরের কার্যক্রমকে পূর্ণাঙ্গ বলা যায় না। এটি আংশিক কিছু খাদ্যপণ্যের মান যাচাই করেছে। এর বাইরে বাজারের শত শত খাদ্যপণ্য রয়েছে। সেগুলোর মান নিয়ে এই অবস্থায় আমরা নিশ্চিতভাবে কোনো মন্তব্য করতে পারি না।
জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এ পরীক্ষাগারেও কিছু খাদ্যপণ্যে দূষণ ও ভেজালের মাত্রা অত্যধিক পাওয়া গেছে। ১২ মাসে তারা তরল দুধের সাতটি নমুনা পরীক্ষা করে। এর মধ্যে চারটি নমুনা মানসম্পন্ন ছিল না। তারা জানিয়েছে, বাজারে থাকা দুধের ৫৭ শতাংশ মানসম্পন্ন নয়। ঘিয়ের চারটি নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অর্ধেক মানহীন। মধুর ৬০ শতাংশ মানহীন। হলুদ-মরিচের গুঁড়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যথাক্রমে ২৩ ও ১৩ শতাংশ মানহীন। বেসনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মানসম্পন্ন পাওয়া যায়নি। বাজারে সবচেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য সয়াবিন তেলের ১১ শতাংশ মানসম্পন্ন নয়। খাদ্যের মান সবচেয়ে বেশি খারাপ দেখা গেছে মিষ্টির ক্ষেত্রে। তাদের যাচাই করা ১৩টি নমুনার মধ্যে ১১টি পরীক্ষার উপযুক্ত ছিল না। পরীক্ষা করা দু’টি নমুনার মধ্যে একটি মানসম্পন্ন পাওয়া গেছে।
উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যের মান নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতা দেখা যায়। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে এমন কোনো পণ্যই বাজারে প্রবেশ করতে পারে না। এ জন্য লাইসেন্স বাতিল ও এর উৎপাদক-বিক্রেতারা কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হন। আমাদের দেশে খাদ্যের মান নিয়ে কাজ করে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাময়িক কিছু নজরকাড়া অভিযান দেখা যায়। দিন শেষে নকল ভেজাল নোংরা মানহীন খাবারে সয়লাব হয়ে থাকে আমাদের বাজার। জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান খাদ্যের মান যাচাই করেই তাদের কর্তব্য শেষ করেছে। প্রকৃতপক্ষে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন ছিল মানহীন প্রত্যেকটি খাবারকে চিহ্নিত করা। এগুলোর উৎপাদক-বাজারজাতকারী ও বিক্রেতাকে বিচারের মুখোমুখি করা। সর্বোপরি, ভেজাল-মানহীন পণ্যগুলোর ব্যাপারে ভোক্তাদের পূর্ণরূপে সচেতন করা, যাতে নতুন করে এসব দূষিত খাবার বাজারে প্রবেশ করতে না পারে। সেটি কিন্তু হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ল্যাবরেটরি টেস্টের খবর মিডিয়ার সূত্রে ভোক্তারা জানার পর তাদের মধ্যে অস্বস্তি আরো বাড়বে। বাজারে কোন জিনিসটি বিশুদ্ধ তা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হবে। আমরা আশা করব, সরকার বাজার থেকে মানহীন খাদ্যপণ্য বিদায় করতে একটি সমন্বিত কর্মপন্থা নেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা