২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নারীর প্রতি সহিংসতা

সংযম শিক্ষা নেই আমাদের

-

নারী-পুরুষের সম্পর্ক মানবজীবনে একটা পরীক্ষার বিষয়। শারীরিক মানসিক গঠনের ভিন্নতা উভয়ের স্বভাবে আলাদা বৈচিত্র্য দিয়েছে। এ নিয়ে ব্যক্তি মানুষের দায় কতটুকু এমন ভাবনা সমাজে খুবই কম। লিঙ্গ নির্ধারণে কারো হাত নেই। তাই নারী-পুরুষের স্বভাব বৈচিত্র্য জোর করে নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দেশে নারী অধিকার নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে বহু কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন নামে মানবাধিকারকর্মীরা সক্রিয়। এরপরও নারীর প্রতি সহিংসতা ও নানামাত্রিক নির্যাতন বেড়েছে। নারীসমাজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণের প্রবণতা একইভাবে বিদ্যমান। ফলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, নারীর পক্ষ হয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত কার্যকারিতা কী?
ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি ও নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে দেশব্যাপী একটি গবেষণা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা কর্মসূচির আওয়তায় বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) উদ্যোগে এটি হয়েছে। এমজেএফের পক্ষে গবেষণাটি করেছে আরেকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডি-নেট। দেশের ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলায় ৫১৮ ব্যক্তির কাছ থেকে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ নারী।
পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের সারাংশে দেখা যাচ্ছে, নারীদের প্রতি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কেমন মনোভাব পোষণ করে তা অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছে। ৮১ শতাংশ মানুষ মনে করে খোলামেলা পোশাকের কারণে মেয়েরা অপমানজনক আচরণের শিকার হন। পোশাক পছন্দে নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তারও একটি সর্বজনীন পরিমিতি বোধ রয়েছে। শালীনতা নিয়ে কথা বলা এখন স্পর্শকাতর বিষয়। এ নিয়ে জরিপ হলে ধর্ষণ বা সহিংসতার সাথে নারীর পোশাক ও দেহভঙ্গির সম্পর্ক জানা যেতে পারে। তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, এ ব্যাপারে জরিপ ও গবেষণা চালাতে সম্ভবত কেউ উৎসাহী হবেন না।
এ ধরনের আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন ধর্ষণের শিকার নারীর নিজেরও দোষ রয়েছে। নারীর প্রতি সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর ধারণগত পরিবর্তন আনতে জরিপের এ ধরনের উত্তরগুলো গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। লক্ষণীয়, নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। অন্যদিকে জোর করে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হয়। নারী অধিকারের নামে কণ্ঠ যতটা উচ্চে তুলে ধরা হয়, সঙ্কট সমাধানে ততটা সচেষ্ট হতে দেখা যায় না। যে কারণে নারী অধিকার নিয়ে মাঠে ব্যাপক কার্যক্রম থাকলেও সহিংসতা-ধর্ষণ অপমান বেড়েই চলেছে। ‘মন্দ’ নারীবিষয়ক একটি প্রশ্নকে জোরালো করার চেষ্টা করা হয়েছে। ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ‘মন্দ’ মেয়ে ‘মন্দ’ ছেলেদের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। ‘মন্দ’ মেয়ে আছেন এমনটি বিশ্বাস করেন ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ওই সব উত্তরদতা মনে করেন, ছেলেমেয়ে উভয়কে ‘নষ্ট’ করে ফেলবে ‘নষ্ট’ মেয়ে । জরিপে উঠে আসা এমন মনোভাব শহরে ও গ্রামের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে। বিষয়টা কতটা বাংলাদেশী মুসলমানদের কুসংস্কার, কতটা বাস্তবসম্মত এ নিয়ে হতে পারে গবেষণা। তবে এমন ধরনের গবেষণা করতে কেউ রাজি হবেন না; সেটাও মোটামুটি নিশ্চিত। এসব ব্যাপার আমাদের নারীবাদী মানবাধিকার কর্মী ও মিডিয়া খোলাসা করতে চায় না।
গবেষণা ফল প্রকাশ করতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিরা জোর দিয়েছেন গতানুগতিক কয়েকটি বিষয়ে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রেণীকক্ষে যৌন শিক্ষা। যদিও স্কুলে যৌন শিক্ষা চালু রয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব কতটা পড়েছে তা স্পষ্ট নয়। প্রজনন শিক্ষা পেয়ে শিশুদের ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি আসক্তি কমেছে কিনা এবং তার বিপরীতে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা কমেছে কি না এ নিয়েও কোনো জরিপ হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। পর্নোগ্রাফির বিস্তার যে আগের চেয়ে বেড়েছে, নির্দ্বিধায় বলা যায়। নারীর প্রতি অপরাধ সংঘটনের খবরও প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে। সেটাও যে অনেক বেড়েছে তাতেও সন্দেহ নেই। ফলে এ কথা বলা অসঙ্গত নয়, যৌন শিক্ষা ছাড়াও অতীতে দেশের নারী-পুরুষ অধিক সংযমী ছিলেন। আমাদের দরকার সংযম শিক্ষা; দুর্ভাগ্য হলো-যা সমাজে এখন অনুপস্থিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জোগাড় হলো না বাজারের টাকা, লাশ হয়ে ফিরলেন তুহিন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু ব্যাটে-বলে ভালো খেলেও দলকে জেতাতে পারলেন না সাকিব ভারতে নারী সামরিক অফিসারদের নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট ভারতে নলকূপ থেকে পানি নেয়ায় দলিত যুবককে পিটিয়ে হত্যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি : পাকিস্তানকে ৫৯১ রুপি দিয়ে সমাধানের ভাবনা আইসিসির এবার লিভারপুলের কাছে আটকে গেল রিয়াল মাদ্রিদ উত্তরসূরী হিসেবে রাউহির নাম ঘোষণা করলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আইসিসি’ এশিয়া ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস পুরস্কার পেল অধিকার মারবা? পারবা না।

সকল