২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সীমান্তে বংলাদেশী হত্যা আর নয়

চাই ন্যায্যতাভিত্তিক সম্পর্ক

-

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উভয় দেশের পক্ষ থেকে নিয়মিত বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ইতিহাসের প্রাধান্য যতটা দেয়া হয় সে তুলনায় সামান্যই গুরুত্ব দেয়া হয় বর্তমানকে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ পাশ কাটিয়ে দুই দেশের দায়িত্বশীলরা যখন উষ্ণ সম্পর্কের ফানুস ওড়ান; তার কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) এক সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুই দেশের সম্পর্কের ইতিবাচক বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেছেন। তার দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ভারত বাংলাদেশ থেকে বহুবিধ সুবিধা নিচ্ছে। এর বাইরে বলতে চেয়েছেন সীমান্ত হত্যার কথা। তিনি স্বীকার করছেন, সীমান্ত হত্যা দু’দেশের সম্পর্কে চাপ বাড়াচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে উভয় দেশ পারস্পরিক সম্পর্কের উষ্ণতা নিয়ে সন্তুষ্ট। দু’দেশেরই শীর্ষ নেতারা বক্তব্য বিবৃতিতে প্রায়ই তা প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার পরিসংখ্যান লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই সময়েই সেটি সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। সীমান্তের ঘটনাবলি বিশ্লেষণে দেখা যাবে; মূলত আইন না মানার প্রবণতা বা আইনের কার্যকারিতা না থাকায় একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী নির্বিচারে প্রতিবেশী দেশের মানুষ হত্যা করতে পারছে। বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এমন কোনো চাপ বিএসএফের ওপর নেই। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কিশোরী ফেলানী হত্যার পর তা নগ্নভাবে প্রকাশ পায়। ভারত আন্তর্জাতিক চাপে ওই হত্যার বিচারের আয়োজন করে। তবে আসামিরা শেষ পর্যন্ত শাস্তি পায়নি। সারা বিশ্ব দেখেছে কতটা নির্মমভাবে ফেলানীকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ ভারত কোনো দোষ দেখতে পায়নি।
ফেলানী হত্যার পরের বছরগুলোতে সীমান্তহত্যা আরো বেড়েছে। ওই বছর ৩১ জনকে হত্যা করা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালে ৪১ জন ও ২০২০ সালে ৫২ জন বাংলাদেশী হত্যার শিকার হন। বিএসএফের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রায়ই সীমান্তহত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন। বাস্তবে সেই অঙ্গীকার পালনে বিএসএফ কোনো দায়বোধ করে না। অথচ ভারতের সাথে বন্ধুত্ব নেই এমন দেশগুলোর নাগরিকদের বিএসএফ হত্যা করে না। এমনকি সীমান্তে বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল রাষ্ট্র নেপাল ও ভুটানের মানুষ এমন প্রাণঘাতী আক্রমণের শিকার হয় না। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সম্প্রতি সীমান্ত হত্যা নিয়ে সাফাই গেয়েছেন একটি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি বলেছেন, ভারতীয়রাও হত্যার শিকার হয়। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো পরিসংখ্যান এ পর্যন্ত কোথাও পাওয়া যায়নি।
শুধু হত্যা নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশীদের প্রতি এমন আরো নিষ্ঠুর আচরণ করে, যাতে বাংলাদেশের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পায়। বিএসএফ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করে থাকে। কেউ মারা গেলে তখন শুধু খবর হয়। বাকি ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। বিগত বছরগুলোতে সীমান্তে বিএসএফের সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনাও ছিল। রয়েছে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও। বাহিনীটির দুর্নীতি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে। ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘এক দানা চিনিও চোরাচালান হতে পারে না বিএসএফের অগোচরে। এদের কর্মকর্তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। ঠিকমতো ভাগ না পেলে তারা গুলি চালায়।’
বাস্তবতা হলো, ভারতের সবচেয়ে বড় ভিসা সার্ভিস সেন্টার ঢাকায়। বাংলাদেশে হাজার হাজার ভারতীয় কাজ করছে। তাদের প্রবাসী আয়ের চতুর্থ বৃহত্তম উৎস বাংলাদেশ। একইভাবে ভারতের পর্যটন বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবদান বিরাট। অন্য দিকে ভাটির দেশ বাংলাদেশের নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। বাণিজ্যে এখনো বিদ্যমান রয়েছে অনেক বাধা। কথার ফুলঝুরির বাইরে উভয় দেশের সম্পর্কের বাস্তবতা ভারতের দিকে ঝুলে রয়েছে। সঙ্গত কারণে বলা যায়, প্রকৃত বন্ধুত্বের জন্য সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে হবে। দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুতেই ন্যায্যতাভিত্তিক সমাধান হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement