২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হুমকিতে ‘মুহুরি সেচ প্রকল্প’

অবিলম্বে বিপন্মুক্ত করুন

-

একটি জাতীয় দৈনিকের খবর, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প এখন হুমকিতে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ফেনী নদীতে ভারত ৩৬টি শক্তিশালী পাম্প বসিয়ে প্রতিদিন ৫২ কিউসেক পানি তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই হুমকিতে পড়েছে মুহুরি সেচ প্রকল্প। আরো জানা যায়, একই কারণে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পানির অভাবের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৩৮ বছর আগে, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান স্বয়ং গিয়ে ১৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মুহুরি সেচ প্রকল্প উদ্বোধন করেন ফেনীর সোনাগাজীতে। ওই প্রকল্পের আওতাধীন ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িÑ এ তিন জেলার ১০টি উপজেলার কয়েক লাখ হেক্টর কৃষিজমি। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন লবণমুক্ত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে মুহুরি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্পটির অধীনে রয়েছে ফেনী ও মুহুরি ছাড়াও আরো নদী। এসব নদীর পানি দিয়ে ১৪ হাজার হেক্টরে সেচ দেয়ার কথা থাকলেও বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে প্রকল্পের ১০ হাজার হেক্টর জমিতেও পানির অভাবে সেচকাজ করা যায় না।
সেচ প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ পানির মূল উৎস ফেনী নদীর স্রোতধারা। ফেনী শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার, বন্দরনগরী চাটগাঁ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এবং সাগর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী, মুহুরি প্রজেক্ট ফেনীর সোনাগাজীতে অবস্থিত। এর থেকে পাশের চট্টগ্রামের বিশাল মিরসরাই উপজেলায়ও সেচ দেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, আলোচিত ফেনী নদীর এক দিকে বাংলাদেশের অলিনগর, অন্য পাশে ভারতের আমলিঘাট। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়ন ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউপির মধে প্রবাহিত, ফেনী নদীর উপর বিখ্যাত শুভপুর ব্রিজটি অবস্থিত, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরনো মহাসড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ সেতুর বিরাট ভূমিকা ছিল, যা বইপত্রে বারবার উঠে এসেছে। এখন শুকনো মৌসুমে চট্টগ্রামের মিরসরাই ছাড়াও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় ও ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী ও সদর উপজেলার একাংশ, কুমিল্লøার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একাংশ এবং নোয়াখালীর কিছু এলাকায় সেচের পানির প্রধান উৎস ফেনী নদী। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এক দিকে ফেনী নদীকে ‘আন্তর্জাতিক’ বলে প্রমাণের বৃথা প্রয়াস পাচ্ছে; অন্য দিকে বছরের পর বছর এ নদীর বাংলাদেশ অংশ ভাঙনের কবলে। পানির অভাবে আজ এ দুরবস্থা। দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ খাবার পানির অভাব মেটাতে ফেনী নদী থেকে নানা কায়দা-কৌশলে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। এ জন্য সাবরুম নামের জায়গার নানা স্থানে পাম্প দিয়ে নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার অব্যাহত রেখেছে। ৩৬টি পাম্প মেশিনের সাহায্যে দিনে ৭২ কিউসেক পানি সরিয়ে নিচ্ছে বলে জানা যায়।
২০১০ সালে জেআরসির ৩৪তম বৈঠকে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম মহকুমা শহরে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দু’বছর পর সাতটি শর্তসাপেক্ষে মানুষের খাবার পানির জন্য লো লিফট পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে ঢাকায় সচিবপর্যায়ের বৈঠকে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে এর বাস্তবায়নে। যার ধারাবাহিকতায়, ভারতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি নেয়ার ব্যাপারে এমওইউ-এর মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের। সে মোতাবেক, উভয়ের প্রকৌশলীরা যৌথভাবে ফেনী নদীতে কূপ স্থাপনের স্থান চূড়ান্ত করার কথা।
দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প মুহুরি প্রকল্প বাঁচাতে হবে। এ জন্য আর বিলম্ব হবে না বলে আমরাও দেশবাসীর সাথে আশা করছি। তা না হলে কৃষি, জনজীবন, পরিবেশ, অর্থনীতি প্রভৃৃতি ক্ষেত্রে দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে অপূরণীয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল