নিজস্ব জনবল কাজে লাগাতে হবে
- ৩১ মার্চ ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীর বিষয়টি ক্রমেই গুরুতর হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলায় যেমন, দেশের বিকাশমান অর্থনীতির জন্যও এটি হুমকি হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সম্প্রতি সরকার ১২টি দেশের ৭৬ জনকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। কতজন বিদেশী নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং চাকরিতে কর্মরত আছেন তার বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দেশে কর্মরত বিদেশীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন তারা। এ সংখ্যা সরকারি তথ্যের প্রতিফলন মাত্র। প্রকৃত এ সংখ্যা বহুগুণ বেশি হবে তাতে সন্দেহ নেই।
কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের‘বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ভারতীয়দের দাপট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় বিভিন্ন খাতে চাকরি করছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশের ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। বেশির ভাগই পর্যটন ভিসায় এসে এখানে থেকে যান। অর্থাৎ সাড়ে চার লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করছেন। তাদের বেতন-ভাতা ডলারে ভারতেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ আয়করটুকু পর্যন্ত পায় না। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট ও পর্যটন খাতে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় কর্মরত। এর পেছনের কারণ নাকি এখানে দক্ষ ও প্রযুক্তিজ্ঞানসমৃদ্ধ জনবলের অভাব। তাহলে গার্মেন্ট খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশটি এ খাতে দক্ষ জনবল এখনো তৈরি করতে পারেনি এমনটাই মনে হয়। কিন্তু এ যুক্তি ধোপে টেকে না যখন দেখা যায়, ভারত থেকে অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাও ভাড়া করে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন অর্থনীতিবিদ যিনি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত, একসময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এবার আমাদের রেমিট্যান্সের টার্গেট ২০ বিলিয়ন ডলার। তাহলে আমরা যা আনতে পারি তার ৫ ভাগের ১ ভাগ আবার বিদেশী কর্মীদের দিয়ে দিতে হয়। অবৈধভাবে কত যায় সেটা সরকার উদ্যোগ নিলে জানতে পারে। কিন্তু উদ্যোগ নেই। ভাবতে অবাক লাগে, এখানে অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রশাসনিক কাজেও বাইরে থেকে লোক আনা হয়।’
এই বাস্তবতায় সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি নিছকই অপরাধকর্মে লিপ্ত অবৈধ বিদেশীদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। ফেরত পাঠানো বিদেশীর মধ্যে চীনের ৩৯ জন, সোমালিয়ার ১৩, ভারতের ১০, নাইজেরিয়ার চার, ফিলিপাইনের দুই, ক্যামেরুনের দুই এবং মালয়েশিয়া, সুরিনাম, জার্মানি, ইয়েমেন, লিথুয়ানিয়া ও তুরস্কের একজন করে নাগরিক রয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য, অনেক বিদেশী নাগরিক অস্ত্র, সোনা ও মাদক চোরাচালান, জাল মুদ্রা তৈরি, এটিএম কার্ড জালিয়াতির মতো অপরাধসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত।
অপরাধীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর সাথে অবৈধভাবে কর্মরত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি; যেখানে বিদেশী কর্মী ভাড়া করে আনা জরুরি। দেশে বেকারত্বের হার এখনো বিপুল। গার্মেন্টের মতো সেক্টরে দক্ষ জনবলের অভাব থেকে থাকলে তা পূরণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের তরুণ জনশক্তিকে দক্ষ করে তোলাই হতে পারে যথার্থ পদক্ষেপ। বহু তরুণ ভাগ্যান্বেষণে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন। তাদের দক্ষ করে তোলার আন্তরিক কোনো প্রচেষ্টা সরকারের নেই।
কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশীদের বেতন-ভাতা জোগাতে ব্যয় করা রীতিমতো বিলাসিতা। আমরা চাই, দেশের তরুণের কর্মসংস্থানের স্বার্থে এ দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক। বিদেশীদের ফেরত পাঠিয়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ জনশক্তি কাজে লাগানো হোক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা