২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মানবাধিকারের প্রশ্ন

কার্যকর পদক্ষেপের সময় এখন

-

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের আগামী দিনগুলো খুব একটা স্বস্তিকর হবে বলে মনে হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এলিট ফোর্স-র্যাব এবং এর কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে সমস্যায় পড়েছে সংস্থাটির কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাজনৈতিক সংলাপে বিষয়টির কাক্সিক্ষত সুরাহা হয়নি। দ্রুত সমাধানের আপাতত সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। বরং সংলাপে অংশ নেয়া সে দেশের উপমন্ত্রী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়টিকে জটিল বলে উল্লেøখ করে এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হবে বলেই আভাস দিয়েছেন। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তার আরো নতুন কারণ সৃষ্টি হচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশন বলছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। বিশেষ করে এ দেশে জনগণের নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার সঙ্কোচনের বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টিটিভ জোসেফ বোরেল।
যে ঘটনার সূত্র ধরে বোরেল তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন, সেটিও বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকর। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইভান স্তেফানিৎস মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে জোসেফ বোরেলকে চিঠি দেন। র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ৪০ দিন পর এ চিঠি দেন স্তেফানিৎস। আর ১৮ মার্চ সেই চিঠির জবাবে বোরেল তার উদ্বেগের কথা জানান। এটিকে নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ থাকত যদি বিশ্বের বড় বড় মানবাধিকার সংগঠন জাতিসঙ্ঘের কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ না জানাত।
বোরেলের বক্তব্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ ও বাংলাদেশের যৌথ কমিশনের বৈঠকে এই উদ্বেগের বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, যৌথ কমিশনের বৈঠকেও ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের অনুকূলে থাকবে না। এমন শঙ্কার কারণ সরকারের প্রতিক্রিয়া। স্তেফানিৎসের চিঠি প্রসঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুুল মোমেন মন্তব্য করেন, বিষয়বস্তু ভালোমতো না পড়েই স্তেফানিৎস চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটুকু বললেও যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমাদের শীর্ষ কূটনীতিক এ চিঠি দেয়ার সাথে আর্থিক লেনদেনের সংযোগ থাকতে পারে বলেও অভিযোগ তোলেন। মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এসব অকূটনীতিকসুলভ বক্তব্য-বিবৃতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নজর এড়িয়ে যাবে এবং এটি আমলে নেবে না। বিশেষ করে আর্থিক লেনদেনের সম্ভাব্যতার অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর একটি বিষয়। সবকিছুই বাংলাদেশী ধরনের রাজনীতি দিয়ে বিচারের প্রবণতা পরিস্থিতির উন্নয়নে কোনোভাবেই সহায়ক হবে না।
দেশে এখনো মানবাধিকার পরিস্থিতির তেমন দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। তবে একটি বড় কাজ হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। সেটি হলোÑ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর গত তিন মাসে একটিও ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এমনকি গুমের ঘটনাও ঘটেনি।
দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তলানিতে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের সব সুযোগ প্রায় রুদ্ধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে এবং হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এটি এক বড় প্রতিবন্ধক। একাধিক মন্ত্রী আইনটির অপপ্রয়োগের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম পুরোপুরি থেমেছে এমন নয়। এসব ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে নিবিড় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো উদ্যোগ আয়োজন নেই।
আমরা মনে করি, এসব বিষয়ে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়। পরিস্থিতির আরো অবনতির আগে সংশ্লিষ্টদের বোধোদয় হবে এটিই প্রত্যাশিত।


আরো সংবাদ



premium cement