নিয়োগপ্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ চাই
- ১৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০
২০১৭ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের জরিপ মতে, দেশে ২৭ লাখ বেকার ছিল। তবে চার বছর আগের এই সংখ্যা এখন নিশ্চয়ই আরো বেড়েছে। কারণ করোনাকালে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। বাস্তবে তাদের অনেকেই এখনো কাজ ফিরে পাননি। এর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বিপুল। ফলে চাকরি যেন সোনার হরিণ। বিশেষ করে সরকারি খাতে। চাকরির নিশ্চয়তা থাকায় যেকোনো সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষিত বেকাররা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এর ওপর করোনাকালে দীর্ঘদিন সরকারি-বেসরকারি সব খাতে চাকরি বন্ধ ছিল। চাকরির বন্ধ দুয়ার খোলায় বেকাররা কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এবার প্রথমে ৩২ হাজার ৫৭৭ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে করোনার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়ায় আরো বেশ কিছু পদ শূন্য হয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আগের এবং বর্তমানের শূন্যপদের বিপরীতে ৪৫ হাজার শিক্ষক এ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে।
কিন্তু এ নিয়োগপ্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত এবং স্বচ্ছ হবে কি না তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দুই বছর আগে যেভাবে পরীক্ষা নিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ১৮ হাজার ১৪৭ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয় এবার সেভাবে হবে তো?
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলেও বেশ কিছু বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কর্মসূচি জানানো হয়নি। যেমন গত বছর পরীক্ষা শুরুর আগেই কমপক্ষে এক থেকে দেড় মাস সময় ধরেই উত্তরপত্রের নিরাপত্তা কোডযুক্ত ওএমআর শিটের প্রি-স্ক্যানিং করা হয়। এতে পরীক্ষার পরে বাইরের কোনো উত্তরপত্র (আন-অথোরাইজড) মূল উত্তরপত্রের বান্ডিলে ঢুকানো অসম্ভব ছিল। অথচ এবার এখনো সে রকম কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। পরীক্ষার মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। দ্বিতীয়ত, প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় কারিগরি সহায়তা দেয় বুয়েট। বুয়েটের পর্যবেক্ষণ হলো, নিয়োগ পরীক্ষা শতভাগ নিখুঁত এবং স্বচ্ছ করতে হলে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার আগে প্রস্তুতির জন্য বুয়েটকে কমপক্ষে ৪০ দিন সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষার আয়োজন করা হলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এতে নানা ত্রুটির শঙ্কা থাকে। এ ছাড়া যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার স্বচ্ছতা বা নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় ব্যবহার করা হয় প্রশ্নের একাধিক সেট। এবার প্রশ্নের কতটি সেট হবে সে সিদ্ধান্তও এখনো হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ করতে প্রয়োজন আসনবিন্যাস পরিকল্পনা। এটি রোল, আইডি বা রেজিস্ট্রেশনের অটো পদ্ধতিতে করা হলে কারো পছন্দের পরীক্ষার্থীর সাথে আসন একত্রে বা পাশাপাশি পড়বে না। কিন্তু সনাতনী পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয়। অতীতে সনাতন পদ্ধতিতে আসনবিন্যাস করে একটি দুষ্টচক্র বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ ছাড়া উত্তরপত্র পরীক্ষার হল থেকে ডিপিই বা মন্ত্রণালয়ে নেয়া হয় তাহলে কোনো ধরনের কারচুপি না হলেও সন্দেহ বা সংশয় প্রকাশের সুযোগ থাকে। কাজেই এ সুযোগ কাউকে দেয়া ঠিক হবে না। গত বছরের মতো এ বছরও বুয়েট ক্যাম্পাস নিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। তাহলে কোনো পক্ষই নিয়োগপ্রক্রিয়ার উত্তরপত্রের মূল্যায়নে কারচুপি করতে পারবে না।
সবার জানা, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাই হচ্ছে প্রতিটি জাতির শিক্ষার বুনিয়াদ। এ জন্য যেকোনো মূল্যে প্রাথমিকে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ এবং বিবেচনাপ্রসূত। আগামীর টেকসই বাংলাদেশ গড়তে এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে। তা না হলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে পিছিয়ে পড়াটাই হবে নিয়তি। এ দিকটি খেয়ালে রেখেই এবারের বিপুল সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে, এটিই চাকরিপ্রার্থীদের সাথে সাথে দেশবাসীর প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা