প্রতিকার পান না স্বজনরা
- ১২ মার্চ ২০২২, ০০:০০
র্যাবের হেফাজতে আরেকজন সাবেক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। ষাট বছর বয়সী নজরুল ইসলাম রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। র্যাবের ভাষ্যমতে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থেকে গত মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে পতেঙ্গায় র্যাব-৭-এর কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি অসুস্থ বোধ করলে পাশের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে উপস্থিত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। র্যাবের জানানো তথ্য মতে, নজরুল হার্টের রোগী ছিলেন। হার্টে তার ব্লক রয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে মৃতুর ঘটনা বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচিত বিষয়। হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু বন্ধে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। বাস্তবে হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ হয়নি। আবার এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনাগুলোয় স্বজনদের বিচার পাওয়ার পথও অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে আছে।
অসুস্থতার তথ্য দেয়ার পাশাপাশি র্যাব জানাচ্ছে, নজরুল একজন পলাতক আসামি। খুনের মামলায় পুলিশ এফআইআর দিয়েছে। আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ অবস্থায় পুলিশের সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার করার আইনগত অধিকার রয়েছে র্যাবের। আমাদের দেশে হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের লোকেরা গড়ে নিশানা হচ্ছেন। দেশে খুন অপহরণের ঘটনা নতুন নয়। এর সাথে রয়েছে নানা ধরনের অপরাধের ছড়াছড়ি। উচ্চহারে যারা অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর অভিযান নেই। ফলে অনেক অপরাধী স্বাধীনভাবে প্রভাব নিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই সমাজে অপরাধ ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়নের কৌশল হিসেবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পরিকল্পিত কার্যক্রম চালায়।
সাধারণ মানুষও হেফাজতে মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। গত মাসে ওয়াজির মিয়া নামে সুনামগঞ্জে একজনকে গরু চুরির অপরাধে আটক করা হয়। তিনি হেফাজতে থাকা অবস্থায় প্রাণ হারান। পরে তার সাথে আটক হওয়া অন্য দু’জনের ভাষ্যে ওই ব্যক্তির ওপর পুলিশি অত্যাচারের ঘটনা জানা যায়। এসব ঘটনার সাথে নানা ধরনের অভিযোগ সামনে আসে। কখনো প্রতিপক্ষের চাপে কখনো অর্থ আদায়ে আসামির ওপর চরম অত্যাচার নেমে আসে। একপর্যায়ে হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা একটা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছিল। তবে বন্দুকযুদ্ধ এনকাউন্টারের মতো ঘটনা গত দুই মাসে দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র্র র্যাবের সাবেক-বর্তমান কয়েকজন সদস্যকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর নজিরবিহীন এই উন্নতি হয়েছে। অন্তত এ দুই মাসে প্রমাণ হলো সরকারের ইচ্ছার সাথে বিচারবহির্র্ভূত হত্যার একটি সম্পর্ক রয়েছে। সরকার চাইলে বিচারবহির্র্ভূত হত্যা বন্ধ থাকে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে চলতি বছরে প্রথম দু’মাসে পুলিশ হেফাজতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে বিচারবহির্র্ভূত হত্যার গতিটি এখনো হেফাজতের মৃত্যুর ক্ষেত্রে সংঘটিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও শূন্যতে নামিয়ে আনা যায়। সরকার চাইলে সেটি সম্ভব। সরকারি পর্যায় থেকে এমন নীতি নির্ধারণ করলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অন্য শাখাগুলো সতর্কতা গ্রহণ করতে পারত।
‘হেফাজতে মৃত্যু রোধ আইন-২০১৩’ রয়েছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এ আইন হেফাজতে মৃত্যুরোধে কোনো কাজে আসছে না। এমনকি স্বজনরা এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এমন মৃত্যুর ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পক্ষ সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। সাধারণত দেখা যায়, স্বজনরা এর প্রতিকার পেতে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে কোনো ধরনের সাহস রাখেন না। সরকারও নিজ থেকে হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করে না। বরং হেফাজতের মৃত্যুর পর স্বজনরা উল্টো চাপে পড়েন। মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বন্ধ করে একটি মানবিক রাষ্ট্র্র গঠন করতে হলে হেফাজতে মৃত্যু আমাদের বন্ধ করতে হবে। এ জন্য দরকার ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি হেফাজতে মৃত্যুর তদন্ত। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। তাহলে কেউ এমন গুরুতর অপকর্ম করতে সাহস করবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা