আইনের বাস্তবায়ন নামমাত্র
- ১১ মার্চ ২০২২, ০০:০০
গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানুষের তথ্য জানার অধিকার স্বীকৃত। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন পাস হয়। এতে তথ্যপ্রাপ্তি সহজ করা হয়। অনেকটা ‘চাহিবা মাত্র’ সরকারের কাছ থেকে যেকোনো বিষয়ে তথ্য পেতে পারেন নাগরিকরা। কিন্তু এ আইনের অনুশীলনে বিরাট ফাঁক রয়েছে। একজন মানবাধিকারকর্মী পুলিশের কাছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে তথ্য চেয়েছিলেন। তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। আইন অনুযায়ী পুলিশ কারো আবেদন এড়িয়ে যেতে পারে না। শেষ পর্যন্ত ওই কর্মীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য সরবরাহ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে তথ্য কমিশন। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন পরিচিত মানবাধিকারকর্মীকে যেখানে তথ্য পেতে কাঠখড় পোড়াতে হয়; সেখানে সাধারণ নাগরিক আদৌ তথ্য অধিকার আইনের সুবিধা নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রাখেন কি না।
মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি ২০২১ সালের ৭ জুন পুলিশ সদর দফতরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। তার জানার বিষয় ছিল, দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট মামলা কত, আসামি কত এবং কতজন গ্রেফতার হয়েছে। তথ্য না পাওয়ায় গত ১৮ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আপিল করেন। সেই আবেদন খারিজ করে একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে আইনের কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে বলা হয়, আবেদনকারীর তথ্য প্রকাশ করার মতো নয়। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, অপরাধ বাড়তে পারে, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচারকার্য ব্যাহত হতে পারে, অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেফতার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার নিয়ে দেশে নাগরিক সমাজে তীব্র সমালোচনা রয়েছে। অভিযোগ আছে এ আইনকে হাতিয়ার করে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করার। সাংবাদিক ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিশানা করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য জনসাধারণের জানা দরকার। প্রকৃত তথ্য জানানো হলে আইনের অপপ্রয়োগ কমবে। নাগরিক হয়রানি বন্ধ হবে। কিন্তু পুলিশ তথ্যউপাত্ত গোপন করার বাহানা খুঁজছে।
পরে হাম্মাদি ১০ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন। কমিশন ৮ মার্চ পুলিশকে নির্দেশ দেয় আবেদনকারীকে ২০ দিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে। যেখানে আদালতের রায়ের বাস্তবায়নে গাফিলতির নজির রয়েছে, সেখানে তথ্য কমিশনের নির্দেশ পুলিশ আদৌ প্রতিপালন করবে কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমাদের এমন শঙ্কার কারণ, তথ্য চেয়ে আবেদনকারী হাম্মাদির এক বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, তার তথ্য চাওয়া নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ উত্থাপন করেন। এতে হয়রানি বোধ করেছেন তিনি।
তথ্য চাওয়ার একটি আবেদন সুরাহা করতে ৯ মাস লেগেছে। আইনকে কিভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে এ ঘটনায় তা স্পষ্ট। বাংলাদেশের নাগরিক সাদ হাম্মাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিস শ্রীলঙ্কায় কর্মরত। তার এ পরিচিতি তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসেনি। এ ধরনের তথ্য সবার আগে চাওয়ার কথা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের। সম্ভবত সরকারি দফতরের কাছে তথ্য চাওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে হতাশ। তাই তারা আগ্রহ দেখান না। একটা তথ্য পুলিশের কাছ থেকে আদায় করতে ঘাটে ঘাটে ঘুরতে হয়েছে। সাধারণ নাগরিকের জন্য তথ্য পাওয়া কতটা দুরূহ ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। আসলে আইন করাই যথেষ্ট নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনের বাস্তবায়ন। আমরা চাই তথ্য অধিকার আইন সত্যিকারার্থে বাস্তবায়ন হোক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা