ইলিশা ফেরিঘাট যেন কেবলই দুর্ভোগ
- জনসমস্যার প্রতি নিদারুণ অবহেলা
- ০৪ মার্চ ২০২২, ০০:০০
জনগণের দুর্ভোগের প্রতি সরকার বা কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কত বেশি নিস্পৃহ কিংবা উদাসীন, তার নগ্ন নজির দ্বীপজেলা ও নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার, ভোলার অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইলিশা ফেরিঘাট। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত, ভোলা প্রতিনিধির পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে ছাপানো ছবিটিতে ওই ফেরিঘাটের নিদারুণ অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ২১টি জেলার সাথে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুট। কিন্তু আজো বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে রয়েছে এ রুটের ইলিশা ফেরিঘাট। এক যুগ ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখানে কোনো পার্কিং স্পেস কিংবা টার্মিনাল নেই। অথচ পার্কিং ব্যবস্থার অভাবে ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের চার কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার ওপরই পণ্যবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহন পড়ে থাকে। ফলে চালকদের ভোগান্তির অবধি থাকে না। এতে এ রুটে যানজট যেন নিত্যকার ঘটনা। এখানে ফেরির অভাবের সাথে যোগ হয়েছে নদীর নাব্যসঙ্কট।
জানা গেছে, বাংলাদেশের দু’চারটি নয়, অন্তত ২১ জেলার সাথে যোগাযোগের জন্য যান চলাচল করে থাকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে। রুটটি চালুর পরে বিভিন্ন আমলের নৌপরিবহন মন্ত্রীরা পরিদর্শন করে এই ফেরিঘাট উন্নয়নের ওয়াদা করেছেন। তবুও আজ পর্যন্ত এতে লাগেনি আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া। তাই এখান দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। যানজট এখানে দিবা-রাত্র ২৪ ঘণ্টার বিড়ম্বনা। এর সাথে যোগ হয়েছে দুর্ঘটনা। পার্কিং সুবিধা ও টার্মিনাল না থাকায় চালক এবং অন্যান্য পরিবহন শ্রমিকের জন্য নেই টয়লেটসহ স্যানিটেশন সুযোগ-সুবিধা। নেই তাদের থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা। এ ঘাটে পৌঁছে পাঁচ-ছয় দিন পর্যন্ত আটকা পড়ে থাকতে হয় মালবোঝাই ট্রাককে। ফলে তাদের ব্যয় হচ্ছে বেশি। তাতে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ট্রাক ড্রাইভারদের বক্তব্য, এক যুগেরও বেশি ঘাট চালু থাকলেও কোনো আধুনিক ট্রাক টার্মিনাল নেই এখানে। ফলে ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পেতে সময় নষ্ট হচ্ছে। অথচ এখানে যানবাহনের চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। দিনে এখানে ৩০০ থেকে ৪০০ মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। কিন্তু ফেরি সে তুলনায় অনেক কম। মাত্র তিনটি ফেরি থাকলেও তার মধ্যে একটি অনেক সময় চলে না। তদুপরি, নাব্য না থাকায় প্রায় সময় নদীর মাঝখানে গিয়ে ফেরি আটকে যায়। তাই দ্রুত ড্রেজিং করা জরুরি। টার্মিনাল না থাকায় ট্রাক রাস্তার ওপর রাখতে হয়। এতে রাস্তা হয়ে যায় সরু।
এ দিকে, স্থানীয় ফেরি ও লঞ্চঘাটে নেই ওঠানামার সংযোগসড়ক, টয়লেট, যাত্রীছাউনি প্রভৃৃতি। যাত্রীরা জানান, এখানে নানান দুর্ভোগ। যাত্রীদের কোনো ওয়াশরুম কিংবা বসার ব্যবস্থা নেই। ছাউনি থাকলেও তা বেশির ভাগ সময় থাকে তালা দেয়া। রাস্তায় যানজটে বিলম্ব হলে যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে পারেন না। তা ছাড়াও বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশে দু’দিকেই গর্ত করে রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। এতে এ রাস্তায় যানবাহন চালাতে অসুবিধা হচ্ছে চালকদের। বরিশাল থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের একজন চালক বলেছেন, ফেরিতে ওঠার জন্য এ ঘাটে রাজ্যের ভোগান্তি সইতে হয়। জোয়ারের সময় এই দুর্ভোগ বেড়ে যায়। কারণ, তখন ফেরিতে গাড়ি তোলা যায় না। আর যদি কেউ উঠতে যায়, যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। ঘাট থেকে শতকোটি টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় হলেও ঘাটের কোনো উন্নতি হয় না কেন? ঘাটের ইজারাদারও বলেন, ‘ব্যস্ততম এ ঘাট থেকে প্রত্যহ ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটে ২০টি লঞ্চ, দু’টি সি-ট্রাক, তিনটি ফেরি ও বহু স্পিডবোট চলাচল করে থাকে। অথচ পার্কিং প্লেস না থাকায় মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক লোকসান গুনতে হয়।’ ইলিশা ঘাটের ম্যানেজার প্রথমেই মানসম্মত সংযোগসড়ক ও পন্টুুনের প্রয়োজনের কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘পার্কিং প্লেস, পাকা সংযোগসড়ক, টয়লেট, যাত্রীছাউনি দরকার। চালকদেরও যাতে অসুবিধা না হয়।’ ‘ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি আন্দোলন’ সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এ রুটে ফেরি যাতায়াতের সূচনা। তবুও আধুনিক বন্দরব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ‘জমির আইনি সমস্যা’ই এখানে পার্কিং প্লেস না হওয়ার হেতু।
আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করে জনগণের দুর্ভোগের অবসান ঘটানো হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা