২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আগের প্রক্রিয়ায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন

দরকার বিরোধীদের আস্থা ফেরানো

-

বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থা অকার্যকর ও বিধ্বস্ত হয়েছে এ ব্যাপারে সম্ভবত কোনো পক্ষের মধ্যে আর বিতর্ক নেই। এ জন্য এককভাবে নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। অথচ রকিব ও হুদা কমিশন ছিল একটি প্রক্রিয়ার অংশ। একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফের সক্ষম দৃঢ়চেতা নির্বাচন কমিশন আশা করা যায় না। শুরুতে এ কমিশনের বাছাই প্রক্রিয়া নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত লুকোচুরির মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হলো। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মতামত আমলে নেয়া হয়নি। ফলে নবগঠিত কমিশনের সদস্যদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের আগেই তারা জাতির একটি বড় অংশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নন। এ অবস্থায় তাদের পূর্বপরিচিতি এবং বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালন নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বিতর্কিত তথ্য-উপাত্ত। প্রকৃতপক্ষে বিগত এক যুগে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কিন্তু আস্থা ফেরানোর বদলে পুরনো বিতর্কিত পথেই হাঁটছে সরকার।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে এবারো প্রথমে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে এককভাবে সরকারের পছন্দনীয় ব্যক্তিরা স্থান পান। তাদের আহ্বানে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ৩২২ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়। সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ব্যক্তি ওই সব নাম প্রস্তাব করে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর নেতৃত্বে থাকা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক জোট কোনো নাম প্রস্তাব করেনি। সেখান থেকে অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের নাম সুপারিশ করে। রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ দেন। উল্লেখ্য, রাষ্ট্র্রপতি সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি শুরু থেকে দাবি করেছিলেন, এ ক্ষেত্রে যেন স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। কার পক্ষ থেকে কোন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তা যেন প্রকাশ করা হয়। এর কোনোটিই বাছাই কমিটি রাখেনি।
আরেকটি দাবি সবার পক্ষ থেকে উঠেছিলÑ নির্বাচন কমিশনারদের এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে যেন বাছাই করা হয় যারা বর্তমান সরকারের আমলে কোনোভাবে সুবিধাভোগী নন। তার পাশাপাশি কমিশনাররা যাতে সৎ, যোগ্য ও অবিতর্কিত ব্যক্তি হন। ইতোমধ্যে নবগঠিত কমিশনের সদস্যদের ব্যাপারে যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, অনুসন্ধান কমিটি রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের এসব কথাবার্তায় কর্ণপাত করেনি। নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যরা এ সরকারের সময় লাভজনক পদে নিযুক্ত ছিলেন। তাদের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া ও তার মেয়াদ বাড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কিছু বিতর্কিত কার্যক্রমও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর এ সরকারের আমলে দু’বার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। ২০১০ সালে আইন সচিব হিসেবে তার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। নীতিমালা না মেনে সরকার ওই নিয়োগ দিয়েছিল। আইন সচিব থাকা অবস্থায় দুই বিচারককে অবসরে পাঠানো নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। ওই ঘটনায় সংসদীয় কমিটি তাকে তলব করেছিল। তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করেছিলেন। হুদা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে কাজ করেছিলেন নবগঠিত কমিশনের এক কমিশনার মো: আলমগীর।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নবগঠিত কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অন্য দিকে বিরোধী দল বিএনপি জানিয়েছে, এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। একটি দেশের রাজনৈতিক আবহ যদি এভাবে বিপরীতমুখী থাকে সেই দেশে কিভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হবে? বর্তমান সরকারের উচিত রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের ইচ্ছা ও আগ্রহের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেয়া। সে জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়েও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন গঠন করেই সরকার দেশের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণের পথ প্রশস্ত করতে পারত। রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ কমিশনার নিয়োগের যেসব মানদণ্ড হাজির করেছিল সেগুলোকে আমলে নিতে পারত। সরকার যদি সেভাবে অগ্রসর হতো তাহলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা বৃদ্ধি পেত। রকিব ও হুদা কমিশন যেভাবে নির্বাচনীব্যবস্থা ধ্বংস করেছে; একই প্রক্রিয়ায় নতুন ইসি গঠন কিভাবে বিরোধীদের আস্থা ফেরাতে পারবে?

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুয়েটের ১২ শিক্ষক-কর্মচারী বরখাস্ত চট্টগ্রামের আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন সূচকের উত্থানে ডিএসইতে লেনদেন চলছে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি ড. ফরহাদের চৌগাছায় অস্ত্র ও গুলিসহ আটক ১ ইসকনের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান মির্জা ফখরুলের সাইফুল হত্যাকাণ্ডে ইসকনের শোক, দায় নেবে না বহিষ্কৃত চিন্ময়ের কর্মকাণ্ডের র‍্যাবের সাবেক ২ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ গাংনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আলগামনচালক নিহত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন মমতা ব্যানার্জি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের জন্য কৌশলগত পরাজয়’

সকল