২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি

দুর্দশায় জনমানুষ

-

নাগরিক জীবনে সাধারণত মানুষের সংসারে ব্যয়ের বড় খাত চারটি- খাদ্য ও বস্ত্র, আবাসন ব্যয় ও পরিষেবার বিল, সন্তানদের পড়াশোনা ও যাতায়াতের খরচ। দ্রব্যমূল্য, পরিবহন ব্যয়, বাসাভাড়া, শিক্ষাখরচ সবই বেড়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। মানুষের দুর্দশার মধ্যে দাম কমাতে খুব একটা উদ্যোগ না থাকলেও বাড়াতে তৎপর সরকারি সংস্থাগুলো। যেমন- গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম একসাথে ১৫ টাকা বাড়ানোতে কৌশলগত এ পণ্যের ওপর প্রায় ৩৪ শতাংশ কর রয়েছে। সেখানে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। অন্য দিকে ‘সিটিং সার্ভিসে’-এর নামে বেশি ভাড়া আদায়, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়াও বন্ধ হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ মালিকদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই ছাড়াই লঞ্চভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষকে ৩৫-৪৬ শতাংশ বেশি ভাড়া দিয়ে লঞ্চে চড়তে হচ্ছে। সরকার গত আগস্টে চাল আমদানির উদ্দেশ্যে আগাম অনুমতি সাপেক্ষে শুল্ককর ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। তবে শর্তের কারণে চাল আমদানি তেমন একটা হয়নি। দামও কমেনি।
চারটি খাতে একসাথে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম অবস্থা গরিবদের সাথে মধ্যবিত্তেরও। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মধ্যবিত্ত অল্প কয়েক টাকা বাঁচাতে এখন নিয়মিত টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের এ নিয়ে মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না; থাকলে নিশ্চয়ই জনজীবনে স্বস্তি ফেরানোর কার্যকর উদ্যোগ দেখা যেত।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকার তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। শুধু ভোজ্যতেলের কথা ধরা যাক। মধ্যম আয়ের পাঁচজনের একটি পরিবারে গড়পড়তা পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল লাগে। টিসিবির হিসাবে, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪৬৫ থেকে ৫১০ টাকা, এখন তা ৭৪০ থেকে ৭৮০ টাকা। শুধু সয়াবিন তেল কিনতে একটি পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। কাঁচাবাজারে মাছ, গোশত ও সবজির দাম নিয়মিত ওঠানামা করে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব ১৮টি সবজির দাম বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ২০২০ সালে সবজির দাম গড়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতি বছর শীতের মৌসুমে সবজির দাম কমে। এ বছর সেভাবে কমেনি। শুধু মুদি দোকান ও কাঁচাবাজারের খাদ্যপণ্য নয়, বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম। বাজারে এখন চালের দাম চড়া। সাম্প্রতিককালে ডাল, তেল ও চিনির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহনভাড়া বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ। শহুরে জীবনে বাসাভাড়া বেড়েছে। স্কুল-কলেজের বেতন ও খাতা-কলমের দামও বাড়তি। ২০২১ সালের শুরুতে যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস সিলিন্ডার (১২ কেজি) ৮০০-৮২০ টাকা ছিল, তা এখন এক হাজার ২৪০ টাকা। বাজারের এমন পরিস্থিতিতে সীমিত আয়ের মানুষ খুবই কষ্টে আছে। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। ফলে প্রতি মাসেই ধারকর্জ করতে হচ্ছে তাদের।
করোনার কারণে জনগণের একাংশ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের তথ্য- দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারি সংস্থা বিবিএস কোনো জরিপ না করলেও সরকার সানেমের দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
এ দফায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের কি কিছুই করার নেই? প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে করছাড়, খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো এবং নিয়মিত তদারকির মতো বাজার নিয়ন্ত্রণের যেসব হাতিয়ার সরকারের রয়েছে সেগুলোর কোনো উদ্যোগই তো সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত জবাবদিহির অনুপস্থিতিই এর কারণ।


আরো সংবাদ



premium cement