প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সরকারের কর্তব্যক্তিরা গুমের বিষয়ে স্বীকার করতে চান না। আবার এমন সব কথা বলতে চান যা দায়িত্বজ্ঞানহীন ও প্রতারণাপূর্ণ। বর্তমান সরকারের পুরো সময়েই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সহযোগী একটি দৈনিক গতকাল গুম নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে তারা গুমের কয়েকটি ঘটনার আংশিক বর্ণনা তুলে এনেছে। গুম করা হয়েছে কী কারণে এবং কারা গুম করেছে কেউ এসব ব্যাপারে কিছু খুলে বলেননি। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সদস্য রয়েছেন। তাদের ওপর ভয়াবহ শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
গুম হওয়ার পর ফিরে আসা ছয়জনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে পত্রিকাটি। রাজশাহীর রাহিদ জানায়, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় চা পান করছিলেন। এ সময় একদল অপরিচিত লোক তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়। তারা তার চোখ বেঁধে ফেলে। স্থানীয় জনতা গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে। অপরিচিত লোকেরা বিশেষ একটি পরিচয় দেয়ার পর জনতা গাড়ির সামনে থেকে সরে যায়। রাহিদ পত্রিকাকে বাহিনীর নাম বলেননি, তিনি এই বাহিনীর নাম খবরে উল্লেখ না করতে তাদের অনুরোধ করেছেন।
সারা দেশে গুমের ঘটনাগুলোর মোটামুটি একই চিত্র পাওয়া যাবে। রাহিদের গুমের বর্ণনা তিনি পত্রিকাকে নিজেই দিয়েছেন। অন্য দিকে এ ধরনের গুমের ঘটনাগুলো পরিবারের নিকটাত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা দেখে থাকে। তারা পরে এর যেসব বর্ণনা দিয়েছেন তা রাহিদের এমন বর্ণনার সাথে মিলে যায়। রাহিদ নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন বাহিনীর নাম নিতে চাচ্ছেন না। কারণ তিনি যে জীবনহানির শঙ্কার মধ্যে পড়েছিলেন এখনো তা থেকে পুরোপুরি মুক্ত, সেটি তিনি মনে করেন না। একই কারণে নিখোঁজ হওয়ার পর ফিরে আসা লোকদের মুখ বন্ধ হয়ে যেতে আমরা দেখেছি। সাধারণত গুমের পর সবাই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো একটি শাখার নাম বলেন। অর্থাৎ যারা গুমের অপারেশনে গেছে তারা র্যাব, পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার সুনির্দিষ্ট পরিচয়ে গেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নিজেদের স্বার্থেই এখন প্রত্যেকটি নিখোঁজ ও গুমের ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে।
আড়াই ঘণ্টা চলার পর রাহিদকে মাইক্রোবাস থেকে নামানো হয়। রাখা হয় চার ফুট বাই ছয় ফুট একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। সেখানে আলোর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। টয়লেটও তাকে সেখানেই সারতে হতো। খাদ্য দেয়া হতো দরজার নিচ দিয়ে। রাত-দিন তিনি কিছুই আঁচ করতে পারতেন না। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, টানা সাত মাস পর তাকে কুঠরি থেকে বের করে চোখ বেঁধে নাটোরে ফেলে রেখে যায়।
পত্রিকায় বর্ণিত অন্য ঘটনাগুলোয় শারীরিক নির্যাতনের পৈশাচিক বিবরণও পাওয়া যাচ্ছে। কী কারণে এই ব্যক্তিদের গুম করা হয়েছে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, সরকার দেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, সব ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ বন্ধ করে দেয়া। তাহলে সে জন্যই কি একটি ভাড়াটে বাহিনী আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নাম করে এসব ঘটিয়েছে? সরকার চাইলে এর রহস্য উন্মোচন করতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গুম হওয়া ৯ জনের হদিস পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরো কয়েকজনের খোঁজ অচিরেই জানা যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে। এ নিয়ে সরকারের তথ্যানুসন্ধানী টিম কাজ করছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের এমন মনোভাবকে স্বাগত জানাতে হয়। অন্ততপক্ষে অস্বীকৃতি নীতি থেকে সরকার কিছুটা হলেও সরে এসেছে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং কমিটির ১২৬ বৈঠকে গুম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গ্রুপের আগের বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করতে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনী গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে। গুমের এসব অভিযোগের বিষয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকার দাবি করেছিল। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে আসতে চায়। জনসাধারণও চায় এ ধরনের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে তারা আমাদের দেশে আসুক। সরকার এ ব্যাপারে কোনো অপরাধ না করলে এ কাজে বাধা দেয়ার কিছু নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা