দেশের স্বার্থ গুরুত্ব পাচ্ছে না
- ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
জ্বালানি খাতে যে বিপুল কর্মযজ্ঞ চলছে তাতে দেশের ও জনগণের স্বার্থ গুরুত্ব পাচ্ছে কি না- এমন সংশয়ের অবকাশ আছে। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হয়েছে এবং জনগণ মোটামুটি স্বস্তিতে আছে এটি সত্য। কিন্তু এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারি ক্রয়নীতি বা টেন্ডারের প্রক্রিয়া বর্জন করে যে নানাবিধ সরকারি সুবিধা দেয়া হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে বিস্তর প্রশ্ন আছে। বিদ্যুৎঘাটতি পূরণের নামে ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থ রক্ষায় জনগণের অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।
এই মুহূর্তেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিপুল ভর্তুকি দিয়ে এলএনজি সরবরাহ করছে সরকার। প্রতি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ৩১ টাকা ৫৬ পয়সা দরে। আর সেটি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দেয়া হচ্ছে চার টাকা ৪৫ পয়সা দরে। প্রতি ঘনফুটে ২৭ টাকার বেশি ভর্তুকি। এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। এটি অবিশ্বাস্য এ কারণে যে, দেশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে এমন কথা কেউ বলেনি; বরং সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময়ই বলছে বাংলাদেশে গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ সেই গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো উদ্যোগই নেয়া হচ্ছে না। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই অবহেলা চলছে।
একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার আয়োজনে গত রোববার জ্বালানি খাতের ওপর এক ওয়েবিনারে ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেছেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্ভাবনাময় একটি দেশ। এখানে গ্যাসের বর্তমান সঙ্কট দুঃখজনক। তিনি বলেন, অবহেলার কারণেই গ্যাসের সরবরাহ কমায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত ২২ বছরে প্রতি বছর গড়ে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে, যা আসলে না করার মতোই। স্থলভাগের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় এখনো গ্যাস অনুসন্ধান করাই হয়নি। আর সমুদ্র তো আছেই। তিনি গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর প্রাধান্য দিয়ে ১০ থেকে ২০ বছরের কর্মপরিকল্পনা তৈরির পরামর্শ দেন। বিইআরসির একজন সদস্য আক্ষেপ করে বলেন, বলা হচ্ছে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানির আগ্রহ কমে গেছে। অথচ তেল-গ্যাস সম্পর্কিত সব তথ্য বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দেয়া হচ্ছে না; তথ্য ছাড়া তারা কিভাবে আগ্রহী হবে? আবার তথ্য থাকার পরও সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপ চালাতে না পারাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
লল্লখিত ওয়েবিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্য ম তামিম বলেন, গ্যাসের চাহিদা বাড়বে ও উৎপাদন কমবে বলে পেট্রোবাংলা নিজেই আভাস দিয়েছিল। অথচ অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়নি। আমদানিতে জোর দিয়েছে। সবার মধ্যে একটি আমদানি মানসিকতা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞের এই মন্তব্য থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে পেট্রোবাংলা বা বাপেক্সের অনাগ্রহের পেছনের কারণ কিছুটা আঁচ করা যায়। মূলত সরকারের দায়িত্বশীলদের আগ্রহ বেশি আমদানিতে। তাতে অনেকেরই ঘাম ঝরানোর প্রয়োজন হয় কম। সুফল পাওয়া যায় সহজে এবং স্বল্প সময়ে। আর সে জন্যই আমদানিই হবে প্রথম অগ্রাধিকার।
ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পূরণে এলএনজির ওপর অধিক নির্ভরশীল হওয়ার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বলছেন, এলএনজি একধরনের অনিশ্চিত জ্বালানি পণ্য। সবসময় সুলভ থাকবে না। দামও স্থির থাকবে না। এই সতর্কবাণীর সহজ অর্থ হলো- এলএনজির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরতা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বিবেচনায় নেয়ার মানসিকতা সংশ্লিষ্টদের আছে বলে মনে হয় না। তাদের কর্মকাণ্ডে এলএনজি আমদানির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার আলামতই স্পষ্ট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা