১০ বছরেও হলো না তদন্ত প্রতিবেদনই
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দেশে বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন বহু বছরের। দেখা যাচ্ছে, জনসাধারণের বড় অংশ বিচার পান না। এই বঞ্চনার হার দিন দিন বাড়ছে। অথচ বিচার প্রশাসনের কোনো ধরনের টনক নড়ছে না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা দেশে বিচার বঞ্চনার জ্বলন্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যম সময়ে সময়ে এই মামলার খবর প্রকাশ করে এবং হত্যার দিনটিতে বিশেষ প্রতিবেদন রচনা করে খুনের ঘটনাটি জাগরূক রাখছে। বাস্তবে সারা দেশে সাধারণ মানুষের এমন অজ¯্র বঞ্চনার ঘটনা ঘটছে যেগুলোর উল্লেখও জাতীয় পর্যায়ে নেই। কেবল ভুক্তভোগী পরিবারগুলোই সেই অসহনীয় বঞ্চনার বোঝা বয়ে বেড়ান।
গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যার ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১২ সালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের বাসায় খুন হন সাগর-রুনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের পাকড়াও করা হবে। একটি ইংরেজি দৈনিক হিসাব করে দেখিয়েছে, খুনের ঘটনার পর গতকাল পর্যন্ত ৮৭ হাজার ৬০০ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। এমনকি সেই মন্ত্রীও চিরবিদায় নিয়েছেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বহুবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সরকার যখন কোনো অঙ্গীকার করে সেটাকে তারা হালকা রাজনৈতিক অবস্থান থেকে করে বলে মনে হয়। তারা শুধু মানুষের তাৎক্ষণিক আবেগ প্রশমনের চেষ্টা করে। এমন প্রতারণামূলক অবস্থান কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সাগর-রুনির হত্যা মামলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও অনেকটাই রাজনৈতিক নেতাদের অনুসরণ করছেন। একটি দৈনিক মামলার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের জানানো হয়, ‘মামলাটি সংবেদনশীল। তাই খুবই গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। যাতে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।’ অথচ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এখনো মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আসামি শনাক্তকরণ, জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়ে রয়ে গেছে। দু’জন ‘অপরিচিত’ ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এতটুকুই জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত দিনেও তাদের ধরতে পারেনি। মামলাটি প্রথম তদন্তভার পান শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। কয়েক দিনের মাথায় সেটি স্থানান্তরিত হয় গোয়েন্দা পুলিশের ওপর। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। এরপর থেকে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার এ পর্যন্ত আদালতের কাছ থেকে ৮৫ বার সময় পেছানোর সুযোগ পেয়েছে। সর্বশেষ তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে এই সাংবাদিক দম্পতির নিকটাত্মীয়দের অনেকে মারা গেছেন। অন্যদিকে, জীবিত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা গভীর হতাশা থেকে বলছেন, ‘বিচার নিয়ে আর ভাবি না।’
প্রবাদ রয়েছে ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’। সোজা বাংলায়, বিচার বিলম্ব করা মানে বিচারের অধিকার অস্বীকার করা। আইনের এই আপ্তবাক্যটি আমাদের নেতারা প্রায়ই আউড়ান। কাজের ক্ষেত্রে ভুলে যান। সাগর-রুনিসহ সারা দেশের বহু বড় বড় মামলার ক্ষেত্রে এটি প্রমাণিত। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের বিগত এক যুগে যা ঘটেছে; এসব ঘটনার মধ্যে রাজনৈতিক উপাদান ছিল। খোদ ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাও হত্যার শিকার হয়ে বিচার পাননি। এক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দলের বহু মানুষ রয়েছেন যাদের বিচারে নজিরবিহীন অচলাবস্থা দেখা যাচ্ছে। আবার সামান্য কিছু মামলার দ্রুতগতিও দেখা গেছে। ওই সব মামলার বিচার সরকার চেয়েছে। একটি দেশে বিচার এমন সিলেকটিভ কায়দায় হলে সে দেশে বিচারবঞ্চনা বাড়াই স্বাভাবিক। এর একটি ভয়াবহ নেতিবাচক দিক রয়েছে। ক্ষমতাসীনরা হয়তো তা উপলব্ধি করতে পারছেন না। যত দ্রুত সরকার সেটা উপলব্ধি করবে ততই সবার জন্য মঙ্গল। আমরা আশা করব সাগর-রুনিসহ প্রত্যেকটি বড় অপরাধের সুষ্ঠু বিচার হোক। মানবতার জয় হোক এ দেশে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা