২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গুম ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ার স্বীকৃতি

প্রত্যাশা সবার খোঁজ দেবে সরকার

-

গুম নিয়ে সরকারি ভাষ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। পররাষ্ট্র সচিব স্বীকার করেছেন, গুম তালিকায় থাকা কয়েকজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। গুমের ব্যাপারে সরকার এতদিন অস্বীকার নীতি নিয়েছিল। এটি দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি; সেই উপলব্ধি থেকে গুমবিষয়ক নীতি পরিবর্তন করা না হলেও অবিচারের শিকার মানুষের কিছুটা নিস্তার মিলতে পারে। একই সাথে নতুন করে গুমের ঘটনা এবং হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর শঙ্কা বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে গত বুধবার পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ‘৭৬ জনের তালিকা থেকে বেশ কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়ার কথা আমরা শুনছি। এই খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিদের বিস্তারিত আমরা জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপকে জানিয়ে রাখছি। খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা আট-নয়জন হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এসব বিষয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। গুমের তালিকায় থাকা আরো কয়েকজনকে বাংলাদেশের ভেতরে-বাইরে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ সচিবের বক্তব্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এ ছাড়া এসব তিনি জোরালো ভাষায় বলেননি। তারপরও কিছু দিন আগে দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যহীন ও অস্বীকার করা, ভুল নীতির চেয়ে আশা জাগানিয়া। গুমের শিকার হওয়া পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পেলে সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।
গুম, হেফাজতে মৃত্যুসহ কয়েক হাজার মানুষের জীবন নিয়ে দেশবাসীর জিজ্ঞাসা রয়েছে। এর মধ্যে গুমের ঘটনা রয়েছে ছয় শতাধিক। ২০১৯ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সঙ্কলিত গুমের শিকার ৮৬ জন। অন্য দিকে জেনেভায় চলমান জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপের উত্থাপিত ৭৬ জনের তালিকা অনুসন্ধান চলছে। কয়েক মাস আগে ৩৪ জনের একটি তালিকা দিয়ে তাদের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সফরের সুযোগ চেয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে তাদের করা সর্বশেষ আহ্বানও সরকার প্রত্যাখ্যান করে। অব্যাহত প্রত্যাখ্যানের নীতির নেতিবাচকতার ভয়াবহ দিক কেমন হতে পারে এখন সেই আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলাবাহিনী র্যাব ও এর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর র্যাবকে জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে নিষিদ্ধ করতে ১২টি মানবাধিকার সংগঠন চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠি জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বিবেচনায় রয়েছে। দীর্ঘ দিনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মানবাধিকার সংগঠনের জোট চিঠিটি দিয়েছে। অস্বীকার করে চোখ বুজে থাকার নীতির কুফল এখানেই থেমে থাকবে না। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ প্রথম সারির দেশ। আমাদের নিরাপত্তাবাহিনীগুলোর সদস্যদের একটি লক্ষ্য থাকে চাকরি জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও মিশনে যাওয়া। এতে করে তারা একটি বাড়তি আয়ের পথ পান। সাথে রয়েছে সদস্যদের মর্যাদার প্রশ্ন। অন্য দিকে দেশ অর্জন করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের সুনামের একটি ব্যাপারও রয়েছে। দেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে মুক্ত করা না গেলে সব মিলিয়ে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপারটি ছিল জননিরাপত্তা। আধুনিক জামানায় জনসাধারণের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের নাগরিকদের জীবন শঙ্কার মুখে ফেলছি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো আমাদের নিজেদেরই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সুরাহার দায়িত্ব ছিল। তাহলে বর্তমান অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। সরকার এসব অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করে, পরে ছলচাতুরীর মাধ্যমে মোকাবেলার নীতি নিয়েছে। এগুলোর কোনোটিই যে কাজে আসেনি আজ তা টের পাওয়া যাচ্ছে। গুম ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার পররাষ্ট্র্র সচিবের পক্ষ থেকে দেয়া খবরকে আমরা স্বাগত জানাই। যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তাদের সম্পর্কে সরকার বিস্তারিত জানাবে। আর যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না; তাদের ব্যাপারেও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সরকার। এ ব্যাপারে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকলে তা-ও জানা যাবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যদি এর সাথে জড়িত থাকে সেটিও খোলাসা হবে। নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা এর মাধ্যমে কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেন। আশা করি সরকার এ নিয়ে সোজা পথ অবলম্বন করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চিন্ময়ের গ্রেফতারে কুমিরের কান্না কাঁদছে শেখ হাসিনা : রিজভী কাউনিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে ব্যবসায়ী নিহত মুন্সিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের স্বীকৃতি ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত শ্রম কমিশনের অগ্রাধিকার দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে, এখন গড়ার পালা : তারেক রহমান অনলাইনে সিম সেবা চালু করেছে টেলিটক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের বিক্ষোভ শাহবাগ থানা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকাতেই রাখার সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সাঁথিয়ায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সভা সিলেটে পরকীয়া প্রেমিকসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক সঙ্কট : শিবির সভাপতি

সকল