২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা

কিসের আলামত

-

আমাদের চিরচেনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবন এবং চার পাশ যেন বদলে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে পারস্পরিক যোগাযোগ, পারিবারিক সামাজিক বন্ধনে দীর্ঘদিন ধরে ধস নামতে নামতে এখন যেন তলানিতে এসে ঠেকেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেটি বিপর্যয়কর হয়ে উঠছে। দৃশ্যমান হয়ে উঠছে মানুষের নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতার বোধ। মাঝে মধ্যে সমাজে এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা দেখে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়ছি। শঙ্কিত হয়ে উঠছি। চার দিকে শোরগোল পড়ে যাচ্ছে। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার রাতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে নিজেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন এক ব্যবসায়ী। ওই দিন দিবাগত রাত ৯টায় আবু মহসিন খান এভাবেই আত্মহত্যা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তৈরী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান ২০১৭ সাল থেকে ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। পরিবারের কোনো সদস্য তার সাথে থাকতেন না। প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্যে লোকসান দিয়েছেন অনেক। এসব কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। স্বজনরা জানিয়েছেন, তিনি পারিবারিকভাবে অসুখী ছিলেন না। কিন্তু এই দাবির সাথে আত্মহত্যাকারীর অন্তিম ভাষ্যের মিল নেই।
আত্মহননের আগে নিজের নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব, নানা হতাশা ও দুঃখের কথা তুলে ধরেন আবু মহসিন খান। তিনি বলেন, ‘আমি ক্যান্সার আক্রান্ত। আমার ব্যবসা এখন বন্ধ। বাসায় একাই থাকি। আমার এক ছেলে; থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। ভয় করে আমি বাসায় মরে পড়ে থাকলে, লাশ পচে গেলেও কেউ হয়তো খবর পাবে না।’ আরো বলেছেন, ‘আমরা সব কিছুই করি ছেলেমেয়ে, স্ত্রী-পরিবারের জন্য। গত করোনা শুরুর আগে থেকে বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা থাকে তারাই তা বোঝে। আমার জীবনে আমি যাদের জন্য বেশি করেছি, তাদের দ্বারাই বেশি প্রতারিত হয়েছি। পিতা-মাতা যা উপার্জন করে তার বেশির ভাগ সন্তানদের পেছনে খরচ করে। প্রকৃত বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে, ফ্যামিলিকে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্যামিলি অনেক সময় বুঝতে চায় না। নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। যারা দেখছেন, তাদের সাথে এটাই শেষ দেখা। সবাই ভালো থাকবেন।’ এরপর কালেমা পড়তে পড়তে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন তিনি।
বৈষয়িক দিক থেকে দেখলে আত্মহত্যাকারীর কোনো সঙ্কট ছিল না। জীবন চলার যাবতীয় উপকরণ তার ছিল। এর পরও যেন কিছুই ছিল না ষাট ছুঁই ছুঁই আবু মহসিন খানের। স্ত্রী একমাত্র ছেলের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তিনি একাই থাকতেন রাজধানীর ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাটে। ছিল না গৃহকর্মী, গাড়িচালকও। শেষ বয়সে একটু প্রশান্তির জন্য আপনজনের সাথে প্রাণ খুলে কথা বলবেন সে উপায় ছিল না। কাছের অনেকে প্রতারণা করায় জীবন নিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। একপর্যায়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনায় যাতে কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয়, সে জন্য আলাদা করে লিখে গেছেন সুইসাইড নোটও।
কেন আমাদের সমাজে এমন সব হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম হচ্ছে? সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, পশ্চিমা ভোগবাদী জীবনব্যবস্থায় আকৃষ্ট হওয়া এর একটি কারণ। বর্তমান সময়ে এটি আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পরিবার ছোট হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো আমরাও পরিবারের বয়োবৃদ্ধদের থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি। তাদের বাড়তি বোঝা ভাবতে শুরু করেছি। বাবা-মার প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ প্রায়ই করতে পারছি না। এসবেরই নানাবিধ সামাজিক বিষফল এখন দেখা দিচ্ছে।
আমরা মনে করি, এই অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তির উপায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক-সমাজিক বন্ধন অটুট রাখা। সেদিকে নজর দেয়া। এ জন্য দরকার পাঠ্যপুস্তকে শৈশব থেকেই সব শিশুকে প্রবীণদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়া। সেই সাথে অসহায় প্রবীণদের দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সমাজকে নিতে হবে। তা না হলে এমন ঘটনা আরো বাড়বে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আলিফের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেবে শামসুল হক ফাউন্ডেশন জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির এক সপ্তাহ পর বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত সমন্বয়কদের ওপর হামলা হালকাভাবে দেখছে না সরকার কমছে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি গাজীপুরে কোরআন অবমাননার অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেফতার অযাচিত অস্থিরতা নয়, দায়িত্বশীল হোন সুখী : দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন বেসরকারি স্কুল-কলেজে সাত পদে এনটিএসসির অধীনে নিয়োগ এই মুহূর্তে হঠকারিতা দিকে যাওয়া জাতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে : মির্জা ফখরুল পাইকগাছার নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

সকল