দেশের সব নদী বাঁচাতে হবে
- ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
নয়া দিগন্তের অষ্টম পৃষ্ঠায় সাম্প্রতিক এক রিপোর্টের শুরু : ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে খরস্রোতা চেত্রা নদীটি খালে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি দখলের ফলে হারাতে বসেছে সব ঐতিহ্য। নদীটির দুই পাড় দখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন চলছে মাঝখানের অংশ দখলের পাঁয়তারা।’
এ নদীর অস্বাভাবিক দখল যে, বেআইনি ও জবরদখল, তা স্পষ্ট। খবরের সাথে দেয়া ছবিটিতে ফুটে উঠেছে অতীতের প্রমত্তা নদীটির বর্তমান অবস্থা। এদিকে, প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া চেত্রা নদীর বুকে চলছে ধানের আবাদ। অথচ মাত্র এক দশক আগেও শুকনো দিনেও এ নদীতে পাঁচ থেকে ছয় ফুট গভীর পানি থাকত। এখন সেটি শুষ্ক মৌসুমে মৃতপ্রায়।
আলোচ্য প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অতীতে এ নদীর বুকে পালতোলা নৌকা চলতে পারত এবং বড় খেয়ানৌকায় নদী পার হতে হতো। আর বর্ষায় উঠত বড় বড় ঢেউ। বর্তমানে এটা সরু লম্বা খালের মতো সঙ্কীর্ণ ও অগভীর। চৈত্রের দিনে নদীর বুকে কোনো পানি না থাকায় চাষিরা ক্ষেতে সেচের পানির অভাবে বিপাকে পড়েন।
হাজারখানেক মৎস্যজীবী পরিবার চেত্রায় মাছ ধরে চলত। আর এখন পানির অভাবে তাদের জীবিকার কষ্টের পরিসীমা নেই। জেলেরা চায় নদীটির পর্যাপ্ত খনন। চেত্রার উৎপত্তি বিখ্যাত তিতাসে। বয়ে গেছে অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের পাশ দিয়ে। রাজাপুরে একদা প্রমত্তা মেঘনায় মিশে ছিল। এখন এই নদীমুখ ভরাট হয়ে কোনো চিহ্নই আর নেই। তাই সেখানে নদী বর্তমানে ধানিজমি। খননসহ প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় সারা বছর পানি থাকে না নদীতে। পলি জমে তলদেশ ভরে যাচ্ছে। মানুষের অন্যায় দখলের দরুন ক্রমেই নদীটি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। গভীরতাও হ্রাস পাচ্ছে এর। একপ্রান্ত বন্ধ হয়ে গিয়ে পানি প্রবাহের অভাবে নদীর করুণ এ দশা। বর্ষায় এ নদীর মৃদু প্রবাহ দেখা গেলেও শুষ্ক মৌসুমে নদী দখল করে ফসল চাষ করা হচ্ছে। চেত্রা নদীর উত্তর-পশ্চিমাংশের কয়েকটি স্থানে সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর মাঝ পর্যন্ত বেদখল। তাই চেত্রা এখন চিকন খাল মাত্র।
এলাকার একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেছেন, ‘পালতোলা নৌকায় আমরা এ নদী দিয়ে মেঘনা নদীতে যেতাম ইলিশ মাছ ধরার জন্য। আর এখন নদীর কোনো চিহ্নই নেই, সেখানে অবাধে চলছে চাষাবাদ।’ অরুয়াইল ইউপির জেলেদের একজন নেতা জানান, ‘একসময় নদীটিতে পানি থাকত অনেক। শত শত জেলে চেত্রায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন পানি নেই। প্রভাব খাটিয়ে নদী দখলে নিয়ে তাতে ধান রোপণ করা হচ্ছে। দখলদারমুক্ত এবং খনন করা ছাড়া আমাদের অন্য স্থানে চলে যেতে হবে। তখন অরুয়াইলে কোনো জেলে পরিবার আর থাকবে না।’
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বলেছেন, এক সময়ের অত্যন্ত স্বোতস্বিনী নদীটি এখন মরা খাল। চলছে নদী দখলের জন্য প্রতিযোগিতা। অবিলম্বে দখল থেকে মুক্ত করতে না পারলে এ নদী হারিয়ে যাবে।’ তবে সরাইলের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার নির্বাহী অফিসার বলেন, ‘নদী দখল সম্পর্কে আমার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে এ জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নদী মাতৃক কিংবা নদীমেখলা বাংলাদেশের প্রাণের সাথে নদ-নদীর তুলনা করা যায়। শুধু চেত্রা নয়; দেশের সব নৌরুটের সারা বছর নাব্যতা বজায় রাখার পাশাপাশি সব নদনদী-খালবিলসহ যাবতীয় জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণ থেকে বাঁচিয়ে এগুলোর গভীরতা ও প্রশস্ততা বজায় রাখতে হবে সবার স্বার্থেই। নদী বাঁচলে এ দেশ বাঁচবে। অন্যথায়, এ জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা