প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি
- ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
চলতি রবি মৌসুমে সারের সরবরাহ নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন কৃষক। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়তি দামে সার কিনতে হয়েছে তাদের। দেশে আশ্বিন থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত রবিশস্যের মৌসুম। এ সময়ে সারের সরবরাহে ঘাটতি ছিল এমন নয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে সার ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। তারা সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেই মৌসুম এখন শেষের দিকে। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী মৌসুমে কৃষক নির্ধারিত দামে যথাসময়ে সার পাবেন কি না তা নিয়ে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ব্যয়ও।
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বহু বছর ধরেই সারে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণে প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার। নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত তথা বিগত ১৩ বছরে শুধু সারেই ভর্তুকি দিয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে সরকারের। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে আড়াই গুণ বেড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর সঙ্গে যদি অসাধু ডিলারদের অপতৎপরতা অবাধে চলতে তাকে তাহলে আবারো সঙ্কটে পড়বেন কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর ডিলার খুচরা বিক্রেতাদের সাথে আঁতাত করে রাতের আঁধারে সার বিক্রি করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেন। পরে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করেন কৃষকদের। এবার প্রতি বস্তা পটাশ সারের নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকার জায়গায় ৯০০ টাকা, ইউরিয়া ৮০০ টাকার জায়গায় এক হাজার টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকার জায়গায় এক হাজার ৩০০ ও টিএসপি এক হাজার ১০০ টাকার জায়গায় এক হাজার ৬০০ টাকা দরে কিনতে বাধ্য হন কৃষক। এমন অভিযোগ ছিল গণমাধ্যমের অসংখ্য রিপোর্টে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার বাড়তি ভর্তুকি দেবে বলে ঘোষণা করেছে। সারের দাম বাড়ানো হবে না। এটি ইতিবাচক চিন্তা। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ সহায়ক হবে আশা করা যায়। কিন্তু সেই সঙ্গে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত যথাযথ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা নির্ধারিত দামে এবং কৃষকের ওপর কোনো রকম জুলুম না চাপিয়ে সুষ্ঠুভাবে সার বিতরণ করছে কি না তা দেখার দায়িত্ব কৃষি বিভাগের। সে দায়িত্ব তারা যাতে পালন করে সেটি দেখার দায়িত্ব মন্ত্রণালয় বা সরকারের।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত সারের বাজার যথাযথভাবে নজরদারি না করায় ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা কালোবাজারে সার বিক্রি করে দেয় এবং কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি দাম আদায়ের সুযোগ পেয়ে যায়। যদিও ডিলারদেরও অভিযোগ আছে সরবরাহ কম থাকার। কৃষক সার না পাওয়ার জন্য তারা সরবরাহ ঘাটতিকেই দায়ী করেন। অথচ সরকারি চাহিদা মাফিক সরবরাহ দেয়ার দাবি করে। এ ক্ষেত্রে পরিবহন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কখনো কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। তবে অপ্রতুল বরাদ্দের অভিযোগের খুব একটা সত্যতা আছে বলে মনে হয় না।
করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে বড় আঘাত এসেছে। শিল্প ও সেবা খাত এখনো পুরোদমে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। বহু মানুষ এখনো বেকার। অনেকের আয় রোজগারে যে ধস নেমেছিল তা এখনো পূরণ হয়নি। এর মধ্যে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দেশের জন্য বিপর্যয়কর হতে বাধ্য। সবদিক বিবেচনা করে কৃষি খাতের ওপর গুরুত্ব দেয়ার দরকার আছে। শুধু প্রণোদনা ও ভর্তুকি দেয়া যথেষ্ট নয়। এগুলো কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা বিধান করাও জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা