আন্তর্জাতিক সংস্থার অভিযোগ আমলে নিন
- ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
বিচারবহির্ভূত হত্যা গুম খুনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতিসঙ্ঘের কাছে দাবি রাখা হয়েছে : বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-র্যাবকে বিশ্ব সংস্থার শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধের। জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাকোঁয়ারকে এক চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্ব মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে।
আমাদের সবার স্মরণে রয়েছে, ২০০৬ সালের এক-এগারোর সেনাসমর্থিত মইন-ফখরুদ্দীন সরকারের ক্ষমতায় আসার উৎস ছিল একটি গুজব। তখন প্রচার করা হয়েছিল, অচিরেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শান্তি মিশন থেকে বাদ দেয়া হবে। অথচ সেই সময় আমাদের সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, দেশের ভেতরে গুম খুনের শিকার হওয়া পরিবারের লোকেরা সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো মর্মান্তিক সব ঘটনার তালিকা করেছে। বৈশ্বিক মানবাধিকারের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে এগুলোর তথ্য-প্রমাণ পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক ফোরামে উপস্থাপন করছে। মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অঙ্গীকার পালনের অংশ হিসেবে এর কার্যকারিতা শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সাবেক এক সেনাপ্রধানের ভিসাও বাতিল করেছে। এরপর সরকারের দায়িত্ব ছিল উত্থাপিত মানবাধিকর লঙ্ঘনের প্রত্যেকটি ইস্যু গুরুত্বের সাথে নেয়া। তদন্তসাপেক্ষে বিহিত করা। অথচ দেখা গেল, সরকার পুরনো অবস্থান অস্বীকারের নীতিই নিয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে, সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে সংস্থাটি। এ জন্য বিশ্বব্যাপী বিপুল শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনা করছে। এই মিশনে বাংলাদেশ প্রধান সহযোগী। অন্য দিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উত্থাপিত তথ্য-উপাত্তে উপস্থাপন করা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর একটা অংশ খোদ শান্তির বিপরীতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের শান্তি প্রতিষ্ঠার নৈতিক অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। ১২ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চিঠিটি জাতিসঙ্ঘকে দেয়া হয় ৮ নভেম্বর। এটি ২০ জানুয়ারি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশ সরকার ও বাহিনীর কিছু সদস্যের মনোভাবও তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে জাতিসঙ্ঘকে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, তাদের পুরস্কার হিসেবে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিচারবহির্র্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের ধারাবাহিক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকার পরও তাদের নিয়োগ দেয়ায় ১২টি সংগঠন উদ্বিগ্ন। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশলেতে বলেছেন, ‘র্যাব সদস্যদের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগের কারণ তৈরি করেছে।’ এ বক্তব্য জাতিসঙ্ঘ আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘র্যাবের কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ইতিহাস রয়েছে- এমন সব ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ করতে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনের দফতরের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’
বোঝা যাচ্ছে সংঘটিত অপরাধগুলোর তদন্ত, বিচারপ্রক্রিয়া ও দায় স্বীকার গুরুত্বপূর্ণ। বিপরীত অভিযুক্তপক্ষ নিজেরাই ভুল তথ্য দিলে কিংবা প্রচারণা চালালে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করবে। এইচআরডব্লিউর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। লক্ষণীয় ‘এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন’ও এর সাথে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত কোনো গুরুতর বিষয় দেশের ভেতরে সুরাহা হওয়া আমাদের জন্যই স্বস্তিদায়ক। সরকারের অস্বীকার বা অগ্রাহ্যের নীতি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। আমরা আশা করব, সরকার নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করবে। মানবাধিকারের স্বীকৃত মর্যাদা রক্ষায় করণীয় কাজে সাড়া দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা