২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
খাদ্যশস্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী

বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

-

দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় না বাড়লেও দিনের পর দিন বাড়ছে খাদ্যশস্যসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। সংসার চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল ও আটা বিক্রির আওতা বাড়িয়েছে। তবে বাজার-ব্যবস্থাপনায় যথাযথ নজরদারি না থাকায় এই কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কষ্ট কতটুকু লাঘব করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
খাদ্যশস্যের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা প্রদান এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে ২০১২ সালে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল-আটা বিক্রি কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে ডিলারদের দোকান ও খোলা ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে চাল ও আটা কিনতে পারেন। গত সাড়ে ছয় মাসে বাজারের তুলনায় কম দামে চার লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ টন চাল ও আটা সরবরাহ করা হয়েছে। বাস্তবে সরকারের এই কর্মসূচিতে মুষ্টিমেয় লোক উপকারভোগী হলেও বাজারে পণ্যগুলোর দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে ওএমএস কার্যক্রমে বাজেটে এক লাখ ৭০ হাজার টন চাল এবং তিন লাখ ৬৪ হাজার টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় শ্রমজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওএমএসের চাল ও আটার চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীর ডিলারদের দোকান ও খোলা ট্রাকে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের অনেকেই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, গত বছর মধ্য জানুয়ারিতে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ছিল সাত লাখ ২১ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ছিল পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার টন, যা মজুদ হিসেবে ছিল স্মরণকালের মধ্যে তলানিতে। বর্তমানে গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭৮ হাজার টনে। এর মধ্যে চাল মজুদের পরিমাণ ১৬ লাখ ৯ হাজার টন, গম ৩ লাখ ৪৪ হাজার টন, ধান ৩৮ হাজার টন।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনাকালীন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্য মন্ত্রণালয় সরকারি গুদামগুলোতে ইতোমধ্যে খাদ্যশস্যের বাফার মজুদ গড়ে তুলেছে। এখন খাদ্যশস্যের মজুদের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টন। বাফার এই মজুদ দেশে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি বাজার পর্যায়ে দাম সহনীয় রাখতে ওএমএস কার্যক্রমও জোরদার করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য করোনা পরিস্থিতিতে যাতে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ কম দামে চাল বা আটা কিনতে পারে। এ জন্য বরাদ্দের বাইরে তিন লাখ টন চাল ও এক লাখ টন গমের বাড়তি বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলা পর্যায়ে ওএমএস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর বরাদ্দও দ্বিগুণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সিটি করপোরেশন, শ্রমঘন চার জেলা, অন্যান্য জেলা সদর ও পৌরসভায় ৭০৫টি কেন্দ্রে ওএমএস কার্যক্রম চালু ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে আরো এক হাজার ৫৯টি কেন্দ্রে ওএমএস চালু হয়েছে। দেশের সব উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল-গম বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা মহানগরের চলমান প্রতিটি ওএমএস দোকানে এক টন চাল বরাদ্দ ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে আরো এক টন বাড়িয়ে দুই টন করা হয়েছে। পাশাপাশি চালের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
ঢাকা মহানগরীতে খাদ্যশস্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওএমএসের চাল ও আটা বিতরণ কার্যক্রম (দোকান/ট্রাকসেল) সরেজমিন তদারকি করতে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, শুধু রাজধানী নয় সারা দেশেই খাদ্যশস্যসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজার তদারক করতে হবে। ঘাটতি পূরণে আমদানিশুল্ক কমিয়ে হলেও সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের দাম সহনীয় থাকবে বলে আশা করা যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement