২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অনিশ্চয়তার শিকার চিংড়িশিল্প

অবিলম্বে নজর দিন

-

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ফসলি জমিতে ঘের দিয়ে লোনা পানি আটকে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ চিংড়িশিল্পের প্রসার ঘটছে। অপর দিকে এর ফলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। চিংড়ি দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করায় পরিচিতি পেয়েছে ‘সাদা সোনা’ হিসেবে। তবে সঙ্গত কারণেই জনগণ ফুঁসে ওঠায় এ শিল্পের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অবিলম্বে এ সমস্যার দিকে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া দরকার। নয়া দিগন্তের পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতার পাঠানো সচিত্র প্রতিবেদনে এ বিষয়ে এবার উল্লেখ করা হয়েছে। এ দিকে সরকার মাছ ও ধানের সমন্বিত চাষের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়।
পাইকগাছার জমির মালিকদের একটি অংশ চিংড়ি চাষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে আন্দোলনে নেমেছে। অন্য দিকে চিংড়ি ঘের মালিকদের কথা হচ্ছে, বৈশাখ মাস থেকে বর্ষাকালজুড়ে মাটিতে লোনা পানি থাকে এবং এরপর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। তাই এ সময়ের মধ্যে চিংড়ি চাষের জন্য লোনা পানি ধরে রাখতে হয়। আবার তখনই বেশির ভাগ কৃষক ক্ষেতে ধান আবাদে ব্যস্ত থাকেন। মিষ্টি পানিতে ধান ও মাছের সমন্বিত চাষাবাদের পরিবেশ সৃষ্টি করে এ চাষ করার জন্য জমির স্বত্বাধিকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি স্থানীয় এমপির সাথে মতবিনিময় করেন চিংড়ি চাষি সমিতির নেতারা। পাইকগাছার ইউএনও এই সভার সভাপতি ছিলেন। এতে লোনা পানি তোলা বন্ধ করে মিঠা পানিতেই চিংড়ি চাষ এবং উপজেলার ২০ একরের কম পরিসরবিশিষ্ট সব খাল উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেন এমপি।
উল্লেখ্য, সুুন্দরবনের গা ঘেঁষা পাইকগাছায় ধান চাষের পাশাপাশি বহুদিন ধরে চিংড়ি চাষ করা হয় বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উদ্দেশ্যে। গত ৫ জানুয়ারি বহু চিংড়িচাষি এটা চালু রাখতে মেমোরেন্ডাম দিয়েছেন ইউএনওকে। কিন্তু একই দিনে, স্থানীয় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান লোনা পানি চিংড়ি চাষের জন্য তোলার বিপক্ষে মত দিলেন। তারা মিষ্টি পানিতেই ধান ও মাছ দু’টিই চাষের পক্ষপাতী। তাদের বক্তব্য, সারা বছর ধরে জমিতে লোনা পানি ধরে রেখে চিংড়ি আবাদের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, এলাকার বৃক্ষসম্পদ নিঃশেষ হচ্ছে, বিশেষত গবাদিপশুর খাবারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, দেশীয় প্রজাতির নানা প্রকার মাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে, লোনা পানির ঢেউয়ে সড়কের ক্ষতি হচ্ছে (কাঁচা বা পাকা এসব রাস্তা বানাতে সরকারকে কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে হয়)। আরো বলা হয়, কয়েক শ’ চিংড়ি ঘের মালিক রাস্তা কেটে পানি সরবরাহের মাধ্যমে রাস্তার ক্ষতি করছেন। আর অনেক জায়গায় রাস্তা কেটে পাইপ বসানোর ফলে রাস্তা নিচু হয়ে যায় এবং এতে জোয়ারের পানি এলাকায় ঢুকে লবণ পানির প্লাবন ও ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার এটাও সত্য, বিভিন্ন কারণ ও যুক্তি সত্ত্বেও লোনা পানি ওঠানো বন্ধ করা হলে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একটি বড় উপায় তথা বিকাশমান চিংড়িশিল্পের বিরাট ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে বহু লোক কাজ হারাবে এবং তাদের আয়ের পথ বন্ধ হবে।
এ পরিস্থিতিতে মিষ্টি পানিতেই মাছের সাথে দেশের প্রধান ফসল ধানের ফলনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করে মত দেয়ার জন্য পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, কৃষি ও মৎস্য কর্মকর্তাদ্বয়, ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং চিংড়িচাষিদের সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদককে নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। উপজেলার মৎস্যবিষয়ক কর্মকর্তা বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে আধুনিক চিংড়ি চাষ শুরু করা হলে লোনা পানির প্রয়োজন পড়বে না। উপজলোর কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘চারটি ইউনিয়নে বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকে লোনা পানিতে চিংড়ির চাষ হচ্ছে। ফলে এলাকার মাটি বহু বছর লোনায় ডুবে থাকায় উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং মৃত্তিকার গুণ বিনষ্ট হচ্ছে।’ যাই হোক, পূর্বোক্ত মতবিনিময়কালে ঘেরসংলগ্ন স্থানে ওয়াপদা ও পথের পাশে বিকল্প বেড়িবাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষের নির্দেশ দেয়া হয়। স্লুইসগেট সংস্কার এবং সংলগ্ন খাল খনন করে পানি সরবরাহের সাথে মাছ ও ধানের সমন্বিত চাষকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, মৃত্তিকার স্বাভাবিকতা বা পরিবেশ ও প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য রক্ষা এবং বৈদেশিক মুদ্রার্জন- উভয়ই বাংলাদেশে গুরুত্ব বহন করে। তাই খুলনার পাইকগাছাসহ সর্বত্র প্রয়োজনে ধান ও চিংড়ি বা অন্য মাছের সমন্বিত চাষাবাদের সম্ভাব্যতার নিরিখে তা নিশ্চিত করা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement