২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ নেই

নাকাল নগরবাসী

-

রাজধানীতে বেশ কিছু দিন ধরে গ্যাস সঙ্কট চলছে। বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না নিয়ে নাকাল হচ্ছেন গৃহবধূরা। বিশেষ করে সকালের দিকে চুলায় গ্যাস একেবারেই থাকে না। চুলা এমন টিম টিম করে জ্বলে যে তাতে রান্না করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ জন্য অনেক বাসায় চাকরিজীবীরা সকালের নাশতা বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্যাসের এ সঙ্কট শুধু বাসাবাড়িতে নয় শিল্প-কারখানায় উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস ঢাকায়। নানা ভোগান্তির মধ্যেও এখন নতুন করে গ্যাসের সঙ্কট চরম বিড়ম্বনার মুখোমুখি করছে রাজধানীবাসীকে। রাজধানীর জুরাইন, গেন্ডারিয়া, রামপুরা, বাসাবো, খিলগাঁও, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেক ও বসিলা এলাকায় গ্যাসের তীব্র সঙ্কট রয়েছে।
শীত মৌসুমে এমনিতেই প্রতি বছর গ্যাস সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েক দিনের গণমাধ্যমের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, শুধু আবাসিক নয়, শিল্প খাতেও গ্যাসের ঘাটতি এতটাই তীব্র যে, বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা। গ্যাস-নির্ভর অনেক শিল্পে উৎপাদন কমে গেছে। করোনা মহামারীর পর এ মুহূর্তে দেশের গার্মেন্ট-শিল্পে প্রচুর অর্ডার এসেছে এবং সেগুলো যথাসময়ে সরবরাহের চাপ আছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে অনেক গার্মেন্ট কারখানা তাদের শিপমেন্ট শিডিউল হারাবে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ মুহূর্তে দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি বিপুল। চাহিদার তুলনায় এখন সরবরাহ প্রায় ৪৩ শতাংশ কম। এ ঘাটতির পরিমাণ চলতি পক্ষকালের মধ্যে আরো বাড়তে পারে। তারপরও চাহিদার এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না সংশ্লিষ্টদের পক্ষে। কর্তৃপক্ষ বিদেশ থেকে ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
উৎপাদনের চাকা ধীর ও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবহন খাতে রেশনিং করে সিএনজি সরবরাহ করায় বেড়ে গেছে যাতায়াতের খরচ। হ্রাস পেয়েছে কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সার উৎপাদনও।
গ্যাসের চাহিদা পূরণে এলএনজি আমদানি অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়। তবে দেশে সরকারি খাতের কেনাকাটায় পুকুর চুরির যে প্রবণতা চলছে তাতে ধারণা করা যায়, গ্যাস আমদানি অনেক কর্মকর্তার জন্যই সুখবর হতে পারে।
দেশে বর্তমানে দৈনিক ৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। অথচ সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট। গত দুই-তিন বছর ধরে দৈনিক ৪১০-৪৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার ৩১০ থেকে ৩৩০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছিল।
জানা গেছে, দৈনিক হিসাবে তিতাসের দুই হাজার ২০০ ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে জোগান রয়েছে মাত্র দেড় হাজার ঘনফুটের। ৭০০ ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট নিয়ে চলতে হচ্ছে। তবে বর্তমান গ্যাস সঙ্কট নিয়ে তিতাস বা পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি তার ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, ‘কারিগরি কারণে ১২ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস গ্যাস অন্তর্গত এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করতে পারে। এ জন্য তিতাস কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করছে।’ তিতাস একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের দুঃখ প্রকাশের মাধ্যম মন্ত্রী কেন হতে গেলেন তা বোধগম্য নয়। এটি মন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি?
কর্তৃপক্ষ যখন জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছে না তখন আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে বলে শোনা যাচ্ছে। অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই, জনগণের সেবা দেয়াই সরকার বা কর্তৃপক্ষের কাজ, নাকি তাদের দুর্ভোগ বাড়ানো?

 


আরো সংবাদ



premium cement