তথ্য-উপাত্তভিত্তিক ব্যবস্থা নিন
- ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দেশের অর্থনীতির সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ হচ্ছে নানা পর্যায় থেকে। তুলে ধরা হচ্ছে সম্ভাব্য সুপারিশ ও পরামর্শ। বিশেষ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত জরিপ ও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এসব জরিপের ফল বিভিন্ন সময় প্রকাশ করা হয়েছে জাতীয় গণমাধ্যমে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক ঝুকি প্রতিবেদন-২০২২-এ বাংলাদেশের অর্থনীতি এই মুহর্তে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা হবে কর্মসংস্থান ও জীবিকার সঙ্কট। সেই সাথে পরিবেশজনিত ক্ষয়ক্ষতি, সাইবার দুর্বলতা, ডিজিটাল বৈষম্যও অর্থনীতির ঝুঁকির তালিকায় থাকবে বলে পর্বাভাস দিচ্ছে সংস্থাটি। বিশ্বের প্রায় এক হাজার বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি ওই প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ঝুঁকির পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুকির বিষয়ও উঠে এসেছে। কর্মসংস্থান ও জীবিকার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় ঝুঁকি হচ্ছে কৌশলগত সম্পদের ভরাজনৈতিকীকরণ।
যেকোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় সবার আগে দরকার একটি নির্ভুল সমীক্ষা। যথাযথ তথ্য ও পরিসংখ্যান ছাড়া কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবসম্মত হওয়ার উপায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশে নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও তা ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের জটিলতা আছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের কারণে প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবমুক্ত নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিবিএসের পরিসংখ্যান প্রণয়নে ক্ষমতাসীন দলের কৃতিত্ব তুলে ধরার প্রবণতা দেখা যায় এটি এখন দেশের সবাই জানে। বেসরকারি যেসব গবেষণা সংস্থা একই বিষয়ে সমীক্ষা চালায় তাদের তথ্যের সাথে বিবিএসের তথ্যের প্রায়ই মিল পাওয়া যায় না।
তা ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রায়ই সমসাময়িক জরুরি বিষয়ে সমীক্ষা চালানোর প্রয়োজনও বোধ করে না। গত দুই বছরে দেশের অর্থনীতিতে কোভিড মহামারীর প্রভাব সম্পর্কিত তেমন কোনো গবেষণা বা জরিপ সরকারি প্রতিষ্ঠান করেনি। একমাত্র উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিছু জরিপ করেছে; কিন্তু সেই জরিপের ফল ক্ষমতাসীনদের পছন্দ হয়নি। তারা সেটি গ্রহণ করেনি। এসব কারণে সমস্যা সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্যভিত্তিক ধারণা পাওয়ার কোনো উপায় নেই।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলেছে, কোভিডের অভিঘাতে বাংলাদেশে কত মানুষের আয় কমেছে বা কত মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকার এ নিয়ে বিশেষ জরিপ করেনি। আবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব জরিপ করেছে, তার ফল সরকার মেনে নেয়নি। কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিয়ে সানেম ও ব্র্যাকের মতো বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু জরিপে দেখা গেছে, গত দুই বছরে দেশের অনেক মানুষের আয় কমেছে। অনেক মানুষ আবার তুলনামলকভাবে উচ্চ দক্ষতার কাজ থেকে নিম্ন দক্ষতার কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি মহামারীর শুরুতে ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে যে অসংখ্য মানুষ শহরে কাজকর্ম হারিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই শহরে ফেরেননি। মহামারীতে কত মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছেন, কত মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে, কতজন জীবিকার প্রযোজনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তার প্রকৃত পরিসংখ্যান ছাড়া সরকার যত পরিকল্পনাই নিক না কেন; তা বাস্তবভিত্তিক হওয়ার কোনো কারণ নেই। এর বাইরে আছে, কর্মসংস্থানে ক্ষমতাসীনদের সংবিধান-পরিপন্থী বিপুল বৈষম্যমলক আচরণ। দলীয়করণের মাধ্যমে কেবল ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির প্রতি বিশ্বস্তদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার নীতি সমাজে সুদরপ্রসারী অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে। গত এক যুগে এই বৈষম্য শুধু বাড়ছেই।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, যা বিদ্যমান বৈষম্য আরো বাড়িয়ে দেবে। আর বৈষম্য থাকলে সমাজ টেকসই হয় না। অর্জিত প্রবৃদ্ধিও আর ধরে রাখা সম্ভব হয় না। তারা এ-ও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে না পারলেও আমাদের সব অর্জন ধলিসাৎ হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রম অপ্রতুল এবং অদক্ষ। আবার মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত হলে শুল্কমুক্ত বাজারের বিপুল সুবিধা থেকেও বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা