২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সিদ্ধিরগঞ্জের নানা সমস্যা

জনপ্রতিনিধিদের নজর দিতে হবে

-

রাজধানীর উপকণ্ঠে সিদ্ধিরগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। এটা নারায়ণগঞ্জ সিটির অন্তর্ভুক্ত এবং এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আসন্ন। এ দিকে সিদ্ধিরগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় জনজীবনে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, দূষণসহ নানা সমস্যা ক্রমবর্ধমান। নির্বাচনে জয়ী জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হচ্ছে, এসব সমস্যার সমাধান করা। তারা যে দলের হন না কেন, জনগণ তাদের নির্বাচিত করার লক্ষ্য ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে সে মোতাবেক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে তাদের। অন্যথায় তারা জনপ্রতিনিধিদের যোগ্য নন বলে ধরে নিতে হয়।
মূলত সারা বাংলাদেশই অভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত। এসব সমস্যা মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং এর মধ্যে মাদক, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পরিবেশ দূষণ ও অপরিছন্নতা, সন্ত্রাস প্রভৃতি মুখ্য। সিদ্ধিরগঞ্জেও এসব সমস্যায় জনগণের জীবন অতিষ্ঠ। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন তথা স্থানীয় সরকার অর্থাৎ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরদের দায়িত্ব সমধিক। শুধু ভোট লাভের উদ্দেশ্যে সুন্দর প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না, তাদের সে অঙ্গীকার সম্পূর্ণ পূরণও করতে হবে জনস্বার্থে। মনে রাখতে হবে, কেবল টাকা ঢাললেই উন্নয়ন হয় না; শুধু অবকাঠামোই উন্নয়নের পরিমাপক নয়। জননিরাপত্তা আর বৈষম্য নিরসন ছাড়া কোনো উন্নয়নের সুফল ভোগ করা যায় না। তাই আইনের শাসন এবং সে সাথে শোষণের অবসান চাই সর্বাগ্রে। সাধারণ নাগরিকদের ট্যাক্সের টাকায় যেকোনো সরকারের ব্যয় নির্বাহ হয়ে থাকে। তাই তাদের প্রতিই সর্বপ্রথম সরকারকে কর্তব্য পালন করতে হবে।
একটি সহযোগী দৈনিকের রিপোর্ট মোতাবেক, নাসিক বা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত সিদ্ধিরগঞ্জের তিনটি ওয়ার্ড। এগুলো হলো ওয়ার্ড নম্বর ১, ২ এবং ৩। এর মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে পাইনাদি পূর্ব ও মিজমিজির বাতেনপাড়া। আর মিজিমিজি দক্ষিণ ও পশ্চিম, কান্দাপাড়া ও সাহেবপাড়া নিয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ড। নিমাইকাঁসারি, নয়া আটি, বাঘমারা এবং সানারপাড় নিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। ভোটারের সংখ্যা এই ওয়ার্ডগুলোতে যথাক্রমে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার, ২০ হাজারের একটু বেশি এবং প্রায় ২৩ হাজার। সর্বপ্রথম ওয়ার্ড ডিএনডি প্রকল্প এলাকায়। বাড়িঘর ঘিঞ্জি ও রাস্তাঘাট সরু। ফলে অপরাধের আস্তানা ও মশার ডিপোতুল্য। আবাসিক এলাকাতেই কারখানাগুলো ধোঁয়া ও বর্জ্য ছড়ায়। ময়লা চার দিকে। নিজ জায়গায় ঘর তুলতে গেলেও চাঁদা দিতে হয়। বাতিহীন পাকা সড়ক আছে। মাদকের কারবার ও সেবন বেড়ে গেছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাছেই মহাসড়ক থাকায় ছিনতাইকারীদের যেন পোয়াবারো। রাস্তায় বাতি নেই। অপরিষ্কার ড্রেনে মশার জ্বালাতন। দখলবাজরা অবাধে ‘চাঁদা’ আদায় করছে। ভূমিদস্যুতা ব্যাপক। তিন নম্বর ওয়ার্ডের বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও মাদক। সড়কে ময়লা আবর্জনা। কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস, ভূমি দখল, ছিনতাই ক্রমবর্ধমান। এলাকায় আজো গোরস্তান নেই। এমফিলধারী একজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচিত হলে মাদক কারবার ও চাঁদাবাজি বন্ধ করব এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করতে কাউন্সিল গঠনপূর্বক শান্তি কায়েমে সচেষ্ট হবো।’
আমাদের প্রত্যাশা, নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের নির্বাচনী ওয়াদা ও দায়িত্বের কথা বিস্মৃত হবেন না। তাহলেই কেবল জনজীবনে সমস্যার বোঝা কিছুটা কমতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে নাসিক প্রতিষ্ঠার পর দু’টি নির্বাচন হয়ে গেলেও জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েও এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানে ভূমিকা না রাখার অভিযোগ উঠেছে। বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের ভোট মৌসুমে তাদের ওয়াদার ফুলঝুরি পরিলক্ষিত হলেও পরে কাউকে পাওয়া যায় না। বরঞ্চ নির্বাচিত ব্যক্তিরা নানা অপকর্মে সম্পৃক্ত হয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। তাই ভোটাররা তাদের ওয়াদাকে গুরুত্ব দেন না।’


আরো সংবাদ



premium cement