২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভারতে মুসলিমদের উচ্ছেদের হুমকি

সম্প্রীতি রক্ষাই হোক সবার কাম্য

-

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাবে উপমহাদেশের অধিবাসীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন সময় বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে। দেশ ভাগ-পরবর্তীকালে এ অঞ্চলে নৃশংস ধর্মীয় দাঙ্গা ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হয়েছে। এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ও মানবতার ওপর বারবার নেমে এসেছে বীভৎস নির্মমতা। দাঙ্গা-পরবর্তীকালে দেখা গেছে, মানুষের দেশান্তরি হওয়ার প্রবণতা। এ অঞ্চলের তিনটি দেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এর প্রভাব হয়েছে সুদূরপ্রসারী।
ধর্মীয় কারণে দাঙ্গা আধুনিক জমানায় কল্পনা করা না গেলেও বিগত বছরগুলোতে ভারতে ধর্মীয় উত্তেজনা দেখা গেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও একতরফা উচ্ছেদের বহু ঘটনা ঘটেছে। দুর্ভাগ্য হলো- ক্ষমতাসীনরা উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সম্প্রতি এক ধর্মীয় সভায় সরাসরি মুসলিমনিধনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে এমন ঘোষণা দেয়া হলেও ঘৃণাসৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ ধরনের ঘৃণার প্রভাব পুরো অঞ্চলের সম্প্রীতি নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খবরে জানা যাচ্ছে, উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন একজোট হয়ে ধর্ম সংসদ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ১৭-১৯ ডিসেম্বর তিন দিনব্যাপী ওই সভায় বিভিন্ন পর্যায়ের উগ্র হিন্দু নেতারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। হিন্দু রক্ষা সেনা নামের একটি সংগঠনের সভাপতি স্বামী প্রবোধানন্দ গিরি ওই ধর্মসভা থেকে মুসলিমনিধনের ডাক দিয়েছেন। প্রকাশ্যে একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘৃণার প্রকাশ নজিরবিহীন। সত্য হলো- ভারত দিন দিন গণতান্ত্রিক চরিত্র হারাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, উসকানিদাতা ওই ধর্মীয় গুরুর সাথে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
প্রকাশ্যে এভাবে গণহত্যার উসকানি দেয়া হলেও ভারত সরকারের কোনো স্তর থেকেই এর প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। লক্ষণীয়, ভারতে সরকার নিজেই ধর্মীয় চেতনার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করে সুবিধা নিতে চায়। ভোটে বিজয়ী হতে ক্ষমতাসীনরা শুরু থেকে এমন পথে হাঁটছেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা বিজেপির মদদপুষ্ট। ঘটনার পক্ষকাল চলে গেলেও ঘৃণা সৃষ্টিকারী উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি ছড়ানো স্বাভাবিক। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ধর্মসভার আয়োজকদের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই দাবি সত্যি হলে কেন এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? এর অর্থ হলো- সরকার নিজেই এমন উসকানি ও ঘৃণা ছড়ানোর ফলে সৃষ্ট সুবিধা নিতে চায়। কিছু দিন আগে আসাম ও ত্রিপুরায় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি যেভাবে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে, তাতে দেশটির ভেতরে সেভাবে প্রতিবাদ হয়নি। এর কারণ, রাজনৈতিক শক্তিগুলো ক্রমেই হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলছে।
ভারতে এখন যে ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানির পরিবেশ বিরাজ করছে, তা পুরো অঞ্চলের সম্প্রীতির বিরুদ্ধে বড় হুমকি। এতে করে ভারতে মুসলমানরা আক্রান্ত হলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অনেক জায়গায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সেজন্য হরিদ্বারের উসকানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে সব মহলের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ভারতের গুটিকয় ব্যক্তি এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অন্য দিকে বিভিন্ন দেশে এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ইসলামাবাদে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে এ ব্যাপারে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি সমান আচরণ করতে পারছে না। এ অবস্থায় উপমহাদেশের বাকি দেশগুলোর এ নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। ভারতের উদার বহুত্ববাদী চরিত্র ফেরাতে এটি কাজে আসতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement