মাটি পরীক্ষা ছাড়া সার প্রয়োগ নয়
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এখানকার মাটির উর্বরাশক্তি সুবিদিত। যদিও অনেক কৃষিপ্রধান দেশের তুলনায় এখনো আমাদের রাসায়নিক সার প্রয়োগের হার কম; কিন্তু বিগত তিন দশক ধরে অতিরিক্ত ফসল ফলানো এবং মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগে দেশের মাটির উর্বরতা আগের চেয়ে কমে গেছে। অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ন, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারে দেশের মাটি উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেয়া ছাড়াও টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এসব কারণে মাটির স্বাস্থ্যহীনতায় এখন প্রতি বছর ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
যদিও এক ফসলি জমিতে বছরে দুই-তিন ফসল ফলাচ্ছেন কৃষক; উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের প্রসার ঘটছে; সুফল হিসেবে দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিতেও খাদ্যঘাটতি মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এর বিপরীতে জমির পুষ্টি ও উর্বরতা কমছে দিনের পর দিন। অথচ আন্তর্জাতিকভাবে আদর্শ মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা। ৪৫ শতাংশই অরগানিক ম্যাটেরিয়াল, ২৫ শতাংশ পানি এবং ২৫ শতাংশ বাতাস থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে অরগানিক ম্যাটার বা জৈব পদার্থ ১ শতাংশেরও কমে চলে আসছে। ফলে দেশে মাটির উর্বরতা বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। উর্বরতা কমে যাওয়ায় ক্রমাগতভাবে রাসায়নিক সারের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সব ধরনের জমির পরিমাণ এক কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর বা মোট জমির প্রায় ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশে। কৃষি ও মৃৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের মতে, মাটিতে যেসব পচনশীল দ্রব্য বা উপাদান থাকে যা বেশি পরিমাণে গাছ ও উদ্ভিদ শোষণ করে থাকে। সেগুলোকেই জৈব উপাদান বলা হয়। তাদের মতে, জৈব পদার্থের মূল উদ্দেশ্য শুধু মাটিতে পুষ্টি সরবরাহ করা নয়, সার্বিক উর্বরতা ভালো রাখা।
ক্রমাগত ফসল ফলানোর কারণে দেশের মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জৈব পদার্থ নেই। জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে, সেই পরিমাণ জৈব পদার্থ যুক্ত করা যাচ্ছে না। ফলে মাটির জৈব পদার্থ শুধু নয়, অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও কমে যাচ্ছে। একটি জমিতে ৩০ বছর আগে পাঁচ-ছয় মণ ধান হতো, এখন হচ্ছে ৩০ মণ। এ পুষ্টি মাটি থেকেই নেয়া হচ্ছে। সেই হারে মাটিকে দেয়া হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই জৈব ও রাসায়নিক সারের সমন্বিত প্রয়োগ দরকার। তাহলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, উর্বরতা ক্ষমতা অক্ষত থাকবে। আর যদি শুধু ফলনের জন্য যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়, তাহলে একসময় দেখা যাবে এই মাটি থেকে তেমন ফলন আসছে না। উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে রাসায়নিক সারের বিকল্প নেই। তবে জৈবসারের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর চিন্তা এখনই করতে হবে।
দেশের মাটির উর্বরাশক্তি ঠিক রাখতে হলে, যে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়; তার শতভাগ কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা ভালো, তা কোথাও নেই। অন্তত ২-৩ শতাংশ জৈব পদার্থ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলেও মাটির উর্বরতা নষ্ট হবে না। পাশাপাশি, উৎপাদন বাড়বে। একই সাথে মাটি পরীক্ষা করে চাহিদা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে (রাসায়নিক ও জৈবসার)। বছরে দুই ফসল আবাদ করার পর মাঝখানে ধঞ্চেজাতীয় সবুজ ফসল চাষ করা যেতে পারে, যা মাটির সাথে মিশে জৈবসার হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি, জমিতে ৭৫ শতাংশ অজৈব এবং ২৫ শতাংশ জৈবসার দিতে হবে। জমিতে জৈবসার প্রয়োগ করা হলে মাটির উর্বরতা ফিরে আসবে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের মাটি খুব বেশি ফসল দিতে পারবে না। এমন অবস্থার মুখোমুখি হলে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। এই বিপর্যয় রোধে এখন থেকেই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা